শুক্রবার   ২৯ মার্চ ২০২৪   চৈত্র ১৪ ১৪৩০   ১৯ রমজান ১৪৪৫

  যশোরের আলো
৪১২২

বিএনপি’র ‘ডু অর ডাই’ ষড়যন্ত্র ফাঁস

সায়েদুল আরেফিন

প্রকাশিত: ৩ ডিসেম্বর ২০১৮  

তর্জন গর্জন করা মেঘ কেটে যায়, বৃষ্টি হয় না বললেই চলে। কিন্তু থমথমে মেঘে শুধু বৃষ্টি নয়, বজ্রপাতেরও সম্ভাবনা উড়িয়ে দেয়া যায় না। বাংলাদেশের নির্বাচনী আকাশ থমথমে মেঘে ঢাকা। প্রহর গুনছে কখন বৃষ্টি নামাবে, কখন হবে তুমুল শিলাঝড়! একটা নিউজ পোর্টালে এমন একটা ইঙ্গিতের খবর বেরিয়েছে।

খবরে বলা হয়, জামাত-শিবির ও হেফাজতের মতো গণতন্ত্রের প্রতি হুমকি হয়ে উঠা দলগুলোকে থামাতে বাংলাদেশের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে মার্কিন কংগ্রেস। এ সংক্রান্ত এক প্রস্তাবে, ধর্মভিত্তিক দলগুলোকে, বাংলাদেশের স্থিতিশীলতা ও ধর্মনিরপেক্ষ গণতন্ত্রের জন্য হুমকি আখ্যা দেওয়া হয়।

মার্কিন কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ প্রতিনিধি পরিষদে বাংলাদেশ বিষয়ে উত্থাপিত প্রস্তাবের শুরুতেই শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করা হয়, মহান মুক্তিযুদ্ধে ৩০ লাখ শহীদের আত্মদানকে। বলা হয়, ১৯৭১ সালে ২ লাখেরও বেশি নারীর সম্ভ্রমহানির সঙ্গে জড়িত জামায়াতে ইসলামী।

`ধর্মভিত্তিক দলগুলোর তৎপরতা বাংলাদেশের গণতন্ত্র এবং গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার জন্য হুমকি` শিরোনামে প্রস্তাবটি উত্থাপন করেন মার্কিন কংগ্রেসম্যান জিম ব্যাঙ্কস। এতে ২০১৩-১৪ সালে বিএনপি-জামাতের সহিংসতার কথা উল্লেখ করে, ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচন নিয়ে উদ্বেগ জানানো হয়েছে।

আগামী ৩০ ডিসেম্বর জাতীয় সংসদ নির্বাচন। বিএনপি প্রথমে বলেছিল যে তাঁরা তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে না, তাঁরা বলেছিল এই সংসদ বহাল রেখে নির্বাচনে যাবে না, খালেদা জিয়ার মুক্তি ছাড়া তাঁরা নির্বাচনে যাবে না, ৭ দফা দাবি অর্জন ছাড়া তাঁরা নির্বাচনে যাবে না। কিন্তু বাস্তবে দেখা যাচ্ছে এসবের মধ্যে কোনো দাবি অর্জন ছাড়াই তাঁরা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছে। এখন আবার বিএনপি বলছে, তাঁরা নির্বাচনে যাচ্ছে জয়ের জন্যে, তবে ভিতরের খবর হলো, তাঁরা নির্বাচনে জয়ের জন্যে যাচ্ছে না। কিন্তু তাঁরা নির্বাচন থেকে কোনভাবেই সরে যাবেন না, সেটাই তাঁরা ইদানীং বলা শুরু করেছে।  

এদিকে, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেছেন, মনে রাখতে হব, আমাদের জন্য এটা শেষ পরীক্ষা। অন্যদিকে জাতীয় জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের পতিত নেতা ও গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী গত শুক্রবার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবে এক আলোচনা সভায় অংশ নিয়ে বলেছেন, এই সরকার টিকতে পারবে না। নৌকা ডুবে গেছে। এই নৌকাকে আর উঠানো যাবে না। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না প্রমুখের উপস্থিতিতে জাফরুল্লাহ এসব কথা বলেন।

একটি নিউজ পোর্টালের খবরে অনেকগুলো সূত্রের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেছে, তারেক জিয়া ২০০১ সালের মডেল অনুসরণ করার চিন্তা ভাবনা করছেন। ২০০১ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠিত হওয়ার বহু আগেই তারেক জিয়া হাওয়া ভবন থেকে নির্বাচনের সঙ্গে সম্পৃক্ত একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে যোগসাজশ করেছিলেন। তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠিত হবার পরপরই ওই সমস্ত কর্মকর্তারা প্রকাশ্যে বিএনপির পক্ষে অবস্থান গ্রহণ করেছিলেন। বিএনপি যেন নির্বাচনে জয়ী হয় সেজন্যেও তারা কাজ করেছিলেন। এবারও নির্বাচনের ক্ষেত্রে তারেক জিয়া সেরকম একটা নেটওয়ার্ক তৈরি করতে চেষ্টা করছেন বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে। এই পরিকল্পনার অংশ হিসেবে তারেক জিয়া আওয়ামী লীগের বিক্ষুব্ধদের টাকা পয়সা ছাড়াও ‘অন্য কিছু’ জরুরি সহায়তা দিয়ে নির্বাচনে মাঠে রাখতে চায়, টাকার বিনিময়ে। আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী কিছু নেতাকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে রেখে তাঁদের ঘাড়ে বন্দুক রেখে কাজ সারা। অধ্যাপক আবু সাইদ বা পাবনার করিম খন্দকারের মত কিছু লোক এখনো আওয়ামী লীগে আছে। তারাই এবারের টার্গেট আগামী এক মাসের জন্য।    

বিএনপির যুবদলের দুই নেতা পাগলা পানির প্রভাবে প্রায় বেহুশ হয়ে বৃহস্পতিবার রাতে বনানীতে একটা গুরুত্বপূর্ণ তথ্য ফাঁস করেছে। তার বলেছে বিলেতি আদেশ হচ্ছে পুরাতন ফর্মুলা বাদ দিয়ে নতুন ফর্মুলায় কাজ করতে হবে। সারা বছর আর মামালা হামালা খাওয়া যাবে না। সামনের পুরা মাস আওয়ামী লীগের কর্মীদের সঙ্গে হাফ আওয়ামী লীগার হয়ে প্রশাসনে বিএনপির প্রতি দুর্বল লোকদের চিহ্নিত করতে হবে। যত টাকা লাগুক তা দেবে “গৌরী সেন”, সেজন্যেই ওপেন সিক্রেট নমিনেশন বাণিজ্য করা হয়েছে। আওয়ামী লীগের সঙ্গে ফাইনাল খেলা হবে ২৯ আর ৩০শে ডিসেম্বর, টাকা পয়সা, অস্ত্র যার যা দরকার সব দিয়েই মরণ কামড় দিতে হবে। “ডু অর ডাই” এই প্রতিজ্ঞা নিয়ে, সেই লক্ষ্য নিয়ে জামায়াত আর জঙ্গি সম্পৃক্ত প্রায় ৩৫ জনকে ধানের শীষের প্রতীক দিয়ে দেওয়া হয়েছে। এখন শুধু একটা স্লোগান চালু করে রাখতে হবে, ‘ভোট হলে আমরা জিতব, কেটে নিলে আওয়ামী লীগ, তবে আমরা নির্বাচনের আগে কেন্দ্র পাহারা দেবো’। নির্বাচনের ফল হবে ২০০১ সালের মতো, কিন্তু ফল নিজেদের পক্ষে আনার কৌশল হবে অনেকটা ডিজিটাল বা সম্পূর্ণ ভিন্ন যে দেবতা যে ভোগে খুশি তাঁকে সেই ভোগ দেওয়া হবে।

লেখক: উন্নয়নকর্মী

  যশোরের আলো
  যশোরের আলো