সোমবার   ০২ অক্টোবর ২০২৩   আশ্বিন ১৬ ১৪৩০   ১৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৫

  যশোরের আলো
সর্বশেষ:
যশোরে আমনের সবুজ ধানক্ষেতে স্বপ্ন বুনছেন কৃষকরা চৌগাছায় পেঁয়াজ বীজ পেলেন ১৭০ কৃষক রেল নেটওয়ার্কে যুক্ত হচ্ছে কক্সবাজার ফ্রিল্যান্সারদের ১০ শতাংশ উৎসে কর প্রযোজ্য নয়: এনবিআর ১৫০ কোটি ডলার ঋণ দিচ্ছে জাপান চুক্তি স্বাক্ষর ভিসা নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার কোনো যৌক্তিকতা নেই
১১৩

অভিশপ্ত পুতুল থেকে জ্যাকসনের চেয়ার, সবই আছে ভুতের জাদুঘরে

প্রকাশিত: ১০ নভেম্বর ২০২২  

নেভাদার এই মরুশহরে হুল্লোড়ে সময় কাটানোর পাশাপাশি বহু পর্যটকই নাকি অন্তত একবার ঘুরতে যান জাক বেগানস-এর মিউজিয়ামে।

হাজার হাজার বর্গফুট জুড়ে ছড়িয়ে আছে এই মিউজিয়ামটি। এই মিউজিয়ামে রয়েছে এমন এক ‘ভূতুড়ে’ পুতুল, যার দিকে তাকালেই নাকি প্রচণ্ড মাথাযন্ত্রণা শুরু হয়। অনেকের আবার বুকে ব্যথা করে। রয়েছে সেই চেয়ারটি, যাতে নাকি শেষ সময়ে বসেছিলেন প্রয়াত পপ-তারকা মাইকেল জ্যাকসন। মিউজিয়াম জুড়ে এ ধরনের নানা সামগ্রীর ‘কুখ্যাতির’ কথা ফুটে উঠেছে টেলিভিশনে পর্দায়। খ্যাতি এনে দিয়েছে জাককেও।

জাকের ‘ভূতুড়ে’ মিউজিয়ামটি যে জমিতে রয়েছে, এককালে তার মালিক ছিলেন সিরিল এস নামে এক নামজাদা ব্যবসায়ী। সে ছিল ১৯৩৮ সালের কথা। ১১ হাজার বর্গফুটের বিশাল জায়গায় উপরে এই মিউজিয়ামটি গড়ে উঠেছে। তিরিশের দশকের শেষে এই বিল্ডিংটি গড়ে তোলেন সিরিল। তবে বহু বছর পর তা হাতবদল হয়ে জাকের দখলে আসে।

আধিভৌতিক বিষয়ে জাকের নিজেরও উৎসাহ কম নয়। ভূতুড়ে কারবার নিয়ে নিজের তৈরি খান দশেক তথ্যচিত্র এবং টেলিসিরিজও তৈরি করে ফেলেছেন তিনি। তার সব কয়টিতেই মুখ দেখিয়েছেন এই অভিনেতা। ‘তাদের’ নানা কাণ্ড নিয়ে আমেরিকার টেলিভিশনে একটি জনপ্রিয় সিরিজও তৈরি করেছিলেন জাক। ২০০৮ সালে ‘ঘোস্ট অ্যাডভেঞ্চার্স’ নামে একটি সিরিজ খুবই জনপ্রিয় হয়েছিল। পরে ঐ একই নামে একটি সিনেমাও তৈরি হয়েছিল। যার সহপ্রযোজক ছিলেন খোন জাক।

তার টুপিতে অবশ্য আরো একটি পালক রয়েছে। নিজেকে ‘প্যারানর্মাল ইনভেস্টিগেটর’ হিসেবে পরিচয় দিতেও ভালোবাসেন জাক। ভূত ধরে বেড়ানোই যার নেশা। এর উপরে বেস্টসেলার বইও লিখে ফেলেছেন। জাকের মতো তার মিউজিয়ামটিও কম আকর্ষণীয় নয়। হাজার হাজার বর্গফুট ধরে ছড়িয়ে থাকা মিউজিয়ামে মোট ৩৩টি ঘর রয়েছে। তাতে টিকিট কেটে ঢোকার পর গাইডের সাহায্যে ঘুরে বেড়াতে পারেন উৎসাহীরা। সেই মিউজিয়ামের এক-একটি ঘরে নাকি রয়েছে ভূতুড়ে জিনিসপত্র। সেগুলো কী কী?

জাকের মিউজিয়ামে পা রাখলেই দেখতে পাবেন মাইকেল জ্যাকসনের একটি চেয়ার। অনেকে যেটিকে মাইকেলের ‘প্রোপোফল চেয়ার’ বলে ডাকেন। ২০০৯ সালের ২৫ জুনের রাতে যে চেয়ারে বসে নাকি ‘প্রোপোফল’ সেবন করেছিলেন মাইকেল। ঘিয়ে রঙের ঐ চেয়ারটি থাকত মাইকেলের শোয়ার ঘরে, ঠিক তার বিছানার কাছেই। লস অ্যাঞ্চেলেসের হোমবি হিলসের প্রাসাদে পপ-তারকার শেষ সময়ে তাকে পরীক্ষা করেছিলেন চিকিৎসক কনরাড মারে। মাইকেলের মৃত্যুতে কনরাডের ভূমিকাও এককালে আতশকাচের তলায় ছিল।

কনরাডের দাবি, গদিমোড়া ঐ চেয়ারে বসেই বেশি মাত্রায় ‘প্রোপোফল’ নিয়েছিলেন মাইকেল। সে জন্যই কি মাইকেলের মৃত্যু হয়েছিল? এ নিয়ে রহস্য মেটেনি। তবে ঐ ওষুধটি অ্যানাস্থেটিকের কাজ করে। এমনকি, ঘুমের ব্যঘাত ঘটলেও চিকিৎসকের পরামর্শে এর সেবন করেন অনেকে। ঐ চেয়ারটিও নিজের দখলে নিয়েছেন জাক। জাকের মিউজিয়ামে পর্যটকদের সবচেয়ে টানে বোধ হয় ‘পেগি ডল’। অনেকের দাবি, দুনিয়ার সবচেয়ে ভূতুড়ে পুতুল এটি। একটি অর্ধচন্দ্রাকৃতি খোপে বসানো হয়েছে পুতুলটিকে। সাদাটে ফ্রকের নিরীহ চেহারার একটি বাচ্চার মুখের আদলের এই পুতুলটিকে দেখলেই নাকি বুকে ব্যথা, মাথা ধড়ফড় করা শুরু হয়।

পেগি ডলের মধ্যে নাকি দুষ্ট আত্মা বাসা বেঁধে রয়েছে। জ়াকের টেলি-সিরিজে যত বার পেগির মুখ ভেসে উঠেছে, তত বারই নাকি দর্শকেরা অস্বস্তিতে পড়েছেন। তাদের গা শিরশির করে উঠেছে। একবার নাকি টিভিতে পেগিকে দেখার পর হার্ট অ্যাটাক হয়েছিল এক নারীর। তা নিয়েও শিরোনামে উঠে এসেছিল এই পুতুলটি। পেগির ভূতুড়ে কীর্তি নিয়ে নেটমাধ্যমেও হইচই হয়েছিল। একজন লিখেছিলেন, ‘টিভিতে পেগিকে দেখার পর ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। সে রাতে দুঃস্বপ্নও দেখি। সাধারণত, এ ধরনের স্বপ্ন দেখি না। তবে খুব মনে রয়েছে, কী ভয়ানক দুঃস্বপ্ন দেখেছিলাম।’

অন্য জনের মন্তব্য, ‘পেগিকে দেখার পর কারও কি প্রচণ্ড মাথা ধরে ছিল? একবার মোটে তাকিয়েছিলাম। অদ্ভুত...। ওর কালো চোখ দুইটি ভয় পাইয়ে দিয়েছিল!’ জাকের মিউজিয়ামে একটি শয়তানের চেয়ার ঘিরেও কম কথা ছড়ায়নি। তাতে বসেই নাকি শয়তান দোল খায়। ডেভিড গ্লাটজেলের দাদা কার্ল গ্লাটজেল জুনিয়রের কাছ থেকে চেয়ারটি কিনেছিলেন জাক। সেই চেয়ারটির উপর নাকি শয়তানের আত্মা ভর করে। লোকজন বলাবলি করে, ১১ বছরের ডেভিডকে নিজেদের দখলে নিয়ে নিয়েছিল ৪০টি দুষ্ট আত্মা। তারপর থেকেই অদ্ভুত আচরণ করতে সে। ডেভিডের ঘরেই নাকি ঐ চেয়ারটি রাখা ছিল।

২০১৯ সালে এক সংবাদমাধ্যমের দাবি ছিল, চেয়ারটি আপনাআপনিই দুলত, মাটি থেকে কিছুটা উপরে উড়ে বেড়াত। এমনকি, কখনো আবার একেবারে হাওয়ায় মিলিয়ে যেত। সে বছর ‘শয়তানের’ চেয়ারে বসার পর নাকি এক বার অদ্ভুত অভিজ্ঞতা হয়েছিল খোদ জাকের। তার দাবি ছিল, ‘শয়তানের চেয়ারে বসার পর আমার পিঠ জুড়ে এতটাই ব্যথা করতে শুরু করে যে রাতে ঘুমাতে পারিনি। অনেক দিন পর্যন্ত সে ব্যথা ছিল। অথচ এমন কোনো ভারী জিনিসও তুলিনি।’

ভূতুড়ে মিউজিয়ামে একটি পুরনো ভ্যান ঘিরে লোকজনের আগ্রহও কম নয়। জ্যাক কেভরকিয়ান নামে আমেরিকার এক প্যাথোলজিস্টের টেলিভিশন শোয়ে ঐ ভ্যানটিকে দেখা যেত। চিকিৎসকের সহায়তায় আত্মহত্যার পক্ষে সওয়াল করা জ্যাকের কাছ থেকে ভ্যানটি ৩২ হাজার ৫০০ ডলারে কিনেছিলেন জাক। ঐ ভ্যানে করেই নাকি আত্মঘাতী হওয়া ১৩০ ব্যক্তির দেহ বয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। জাকের কাছে রয়েছে বহু সিরিয়াল কিলারের সংগ্রহে থাকা জিনিসপত্রও। সে সবই তার মিউজ়িয়ামে দেখা যায়। ষাটের দশকের কুখ্যাত অপরাধী চার্লস ম্যানসনের রক্তমাখা ছাই থেকে সিরিয়াল কিলার টেড বান্ডির চশমা- সবেতেই হামলে পড়েন উৎসাহীরা।

  যশোরের আলো
  যশোরের আলো