শনিবার   ১০ জুন ২০২৩   জ্যৈষ্ঠ ২৬ ১৪৩০   ২০ জ্বিলকদ ১৪৪৪

  যশোরের আলো
সর্বশেষ:
লোডশেডিং কমাতে বাড়ছে বিদ্যুৎ আমদানি ও উৎপাদন স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে শিক্ষা ব্যবস্থা পিছিয়ে থাকবে না স্কুলে গিয়ে ৬১ বছর আগের বকেয়া বেতন পরিশোধ করলেন সোহরাব যশোরে পাওয়া যাচ্ছে না চার্জার ফ্যান প্রথমবারের মতো টাকায় বিদেশি ঋণ পরিশোধ
৩৬

অভয়নগরের একাদশ শিবমন্দিরটি হতে পারে পর্যটন কেন্দ্র

নিউজ ডেস্ক

প্রকাশিত: ২২ মে ২০২৩  

অভয়নগর উপজেলার বাঘুটিয়া ইউনিয়নের ঐতিহ্যবাহী স্থান একাদশ শিবমন্দির, কয়েক শতাব্দী পেরিয়ে ভৈরব নদীর তীরে কালের স্বাক্ষী হয়ে এখনো দাঁড়িয়ে আছে। এটি সনাতন ধর্মীয় ঐতিহ্যের স্বাক্ষী। একাদশ শিব মন্দিরের সাথে জড়িয়ে আছে অভয়নগর উপজেলার নামকরণের ইতিহাস। যশোর-খুলনা মহাসড়কের রাজঘাট থেকে তিন কিলোমিটার দূরে ভৈরব নদীর উত্তর তীরে একাদশ শিবমন্দির অবস্থিত। এখানের মন্দিরগুচ্ছে মোট ১১টি মন্দির রয়েছে।

ইতিহাস থেকে ধারণা করা হয়, আনুমানিক অষ্টাদশ শতকে মন্দিরগুচ্ছটি চাঁচড়া জমিদার পরিবারের সদস্য রাজা নীলকণ্ঠ নির্মাণ করেন। রাজা নীলকণ্ঠ বসবাস করতেন ভৈরব নদীর পাড়ে। এরই মধ্যে রাজা নীলকণ্ঠের ঘরে জন্ম নেয় এক রাজকন্যা। তার নাম রাখা হয় অভয়া। অভয়ার নামের সাথে মিল রেখে এলাকার নাম রাখলেন অভয়নগর।

রাজা তার মেয়ে অভয়াকে বিয়ে দিলেন নড়াইলের জমিদারের ছেলে নীলাম্বর রায়ের সাথে। বিয়ের কিছু দিন পর নীলাম্বরে মৃত্যু হয় দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়ে। অল্প বয়সে বিধবা হন অভয়া। ওই সময়ে সনাতন ধর্মে দ্বিতীয় বিবাহের কোনো নিয়ম না থাকায় অভয়া বাকি জীবন পূজা-অর্চনা করে কাটাতে চান। নীলকণ্ঠ মেয়ে অভয়ার ধর্মীয় কাজের জন্যই এই একাদশ শিবমন্দিরটি প্রতিষ্ঠা করেন।

একাদশ শিবমন্দির নির্মাণে চুন, সুরকি ও ইট ব্যবহার করা হয়েছে। পূর্ব ও পশ্চিম দিকে দুই সারিতে চারটি করে বর্গাকৃতির মন্দির রয়েছে। দক্ষিণ দিকে রয়েছে দু’টি মন্দির। প্রতিটি মন্দির মাঝখানের উঠানের দিকে মুখ করে দাঁড়ানো। মন্দিরগুচ্ছের উত্তর দিকে রয়েছে বড় একটি মন্দির, যা দক্ষিণমুখী।

শিবমন্দিরগুলো দেখতে প্রতিদিন দূর-দূরান্ত থেকে অনেক দর্শনার্থী আসে। তাদের কথায়, জায়গাটি সুন্দরভাবে সংস্কার করলে পর্যটকরা ঐতিহাসিক স্থানটি দেখতে আগ্রহী হবে।

একাদশ শিবমন্দিরের সাবেক সভাপতি মিলন কুমার পাল বলেন, ‘আমাদের একাদশ শিব মন্দির অত্যন্ত জরাজীর্ণ ছিল। পরে সরকারের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ অধিগ্রহণ করেন। আমরা মনে করেছিলাম, একটা সুন্দর পরিবেশ পাব এবং মন্দিরগুলো খুব সুন্দরভাবে সংস্কার করা হবে। কিন্তু এ পর্যন্ত কিছুটা কাজ হয়েছে, অনেক কাজ এখনো বাকি। এখানে বিশ্রাম করার কোনো জায়গা নেই। এছাড়া টয়লেট, সুপেয় পানি, পর্যাপ্ত আলো, নিরাপত্তা বেষ্টনি যেটা আছে তাও সামনের দিকে ফাঁকা। সারাদিনের জন্য যে পাহারাদার থাকা দরকার, তাও নেই। প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের ঊর্ধ্বতন কতৃপক্ষের কাছে আমাদের দাবি, অবিলম্বে এটা সংস্কারের।’

অভয়নগর উপজেলা চেয়ারম্যান শাহ ফরিদ জাহাঙ্গীর বলেন, এগারো শিবমন্দিরটি শত শত বছরের পুরানো। এটা এখন জরাজীর্ণ অবস্থায়। এটা আমাদের অনেক ঐতিহ্য বহন করছে। এটার সংরক্ষণ করা একান্ত দরকার। আমাদের উপজেলা পরিষদের পক্ষ থেকে যদি কোনো সহযোগিতা করার সম্ভব হয়, আমরা অবশ্যই সহযোগিতার হাত বাড়াব। এছাড়া, যথাযথ কর্তৃপক্ষকে আমরা আহ্বান জানিয়েছি এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার জন্য।’

অভয়নগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মেজবাহ উদ্দীন বলেন, এগারো শিবমন্দিরটি দেখতে অসংখ্য মানুষ সেখানে ভিড় করে। বিশেষ করে হিন্দু ধর্মাবলম্বী বা সনাতন ধর্মের মানুষের কাছে এটা একটা তীর্থ স্থান। মন্দিরের পরিবেশ আরো সুন্দর করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।’

  যশোরের আলো
  যশোরের আলো
এই বিভাগের আরো খবর