দু’ফোটা চোখের পানি বন্ধু আমজাদের জন্য
নিউজ ডেস্ক
প্রকাশিত: ১৭ ডিসেম্বর ২০১৮

: এখানে রফিকুল হক কোথায় থাকেন?
আমাকে সামনে পেয়ে প্রশ্নটা সরাসরি ছুড়ে দিল আমার দিকেই।
তাকিয়ে দেখি ডাগর দুটি গভীর চোখ, মাথাভর্তি কালো ঘন চুল, শ্যামলা রঙের ছিপছিপে একটি তরুণ। তার চোখে জিজ্ঞাসা।
সেটা ১৯৫৭ সালের মার্চ কিংবা এপ্রিল মাস হবে। আমি তখন পুরান ঢাকার কোর্টকাচারির ঠিক পেছনে, ২৫ কোর্ট হাউস স্ট্রিটে ‘মতিমহল রেস্ট হাউস’ নামে একটি মেসে থাকি। মাসিক ১৫ টাকা ভাড়ায় নিচতলার ছোট্ট একটি ঘর। ঘরে একটি সিঙ্গেল চৌকি। শিথানের দিকে দেয়ালঘেঁষা লেখাপড়ার টেবিল একটা। তার সামনে একটিমাত্র কাঠের চেয়ার। ঘরের দরজা দিয়ে ঢুকলেই আড়াই হাত বাই তিন হাত খালি জায়গা। রেস্ট হাউসের সদর দরজা দিয়ে ঢুকলেই এক চিলতে উঠোন। উঠোনের উত্তর-পশ্চিম কোণে একটি জাম্বুরা গাছ- ঠিক আমার ঘরের সামনেই।
সেদিন দুপুরবেলা ওই গাছের নিচে একটা টুলে বসে আমি আমার নাগরা জুতায় তরল সাদা রং লাগাচ্ছিলাম। সেখান থেকে উঠে এসে তরুণটির মুখোমুখি দাঁড়ালাম।
: কাকে চান?
: রফিক। রফিকুল হক। ঠিকানা তো এইটাই। ২৫ কোর্ট হাউস স্ট্রিট। মতিমহল রেস্ট হাউস। ও লেখালেখি করে। ছড়া লেখে। এখানে কোনো কলেজে পড়ে।
আমার মুখ ফসকে বেরিয়ে গেল, আমিই রফিক। রফিকুল হক। আপনি?
জিজ্ঞাসু চোখে তাকালাম তার দিকে। চকিতেই তার মুখটা উজ্জ্বল হয়ে গেল।
: আরে ব্যাটা, আমি আমজাদ। জামালপুরের আমজাদ হোসেন।
কপালে উঠল আমার চোখ। আমজাদ?
ও দু’হাত বাড়াতেই আমরা একে অপরকে বুকে টেনে নিলাম।
কলমবন্ধুর সঙ্গে প্রথম সাক্ষাতের সে মুহূর্তটি আজ আমার মনে ‘এই সেদিনের কথা’ বলে উজ্জ্বল হয়ে উঠছে। শুক্রবার যখন আমি অফিসের কাজে খুবই ব্যস্ত, দুপুরের দিকে খবর পেলাম আমার প্রিয় বন্ধু আমজাদ পরলোকে যাত্রী হয়েছে। কয়েক মিনিট কথা বলতে পারিনি। হঠাৎই পানিতে ভারি হয়ে উঠেছিল চোখের পাতা।
ছেলেবেলা থেকেই আমজাদ লেখালেখি করত। জামালপুরের কবি অধ্যাপক ইমামুর রশিদের কথা প্রায়ই ওর মুখে শুনতাম। এই ইমামুর রশিদের অনুপ্রেরণাতেই আমজাদ লেখালেখির জগতে আসে। আমাদের সময়ে কলমবন্ধুত্ব বা পেন ফ্রেন্ডশিপের খুব চল ছিল। আমরা দু’জনই সে সময়ে প্রগতিশীল দৈনিক সংবাদপত্র সংবাদের ছোটদের পাতা খেলাঘরের লেখক ছিলাম। খেলাঘরের পরিচালক অর্থাৎ বিভাগীয় সম্পাদক ছিলেন কবি হাবীবুর রহমান। ভাইয়া নামে তিনি ওই পাতাটা পরিচালনা করতেন।
ভাইয়া ছিলেন খাঁটি জহুরি। দেশের আনাচে-কানাচে থেকে যারা ওই বিভাগে লেখা পাঠাত, তাদের মধ্যে যাদের লেখায় তিনি সম্ভাবনার স্ফুলিঙ্গ খুঁজে পেতেন, তিনি তাদের পৃষ্ঠপোষকতা করতেন। এভাবেই তিনি খুঁজে বের করেছিলেন রাজশাহীর আবুল কালাম মঞ্জুর মোরশেদ, নাজমা বেগম (পরে নাজমা জেসমিন চৌধুরী), ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আল মাহমুদ, সিলেটের দিলওয়ার, চট্টগ্রামের সুকুমার বড়ুয়া, যশোরের আল কামাল আবদুল ওয়াহাব, ফরিদপুরের গোলাম হাক্কানী খান, জামালপুরের আমজাদ হোসেন, বরিশালের গোলাম সারওয়ার, হেদায়েত হোসেন মোর্শেদসহ আরও অনেকের সঙ্গে আমাকেও।
আমাদের প্রত্যেকের সঙ্গে প্রত্যেকের ছিল হৃদ্যিক সম্পর্ক। দূরে থাকলেও আমরা সবাই ছিলাম খুব কাছের। চিঠি লেখালেখির মাধ্যমে আমাদের মধ্যে গড়ে উঠেছিল নিবিড় বন্ধুত্ব।
যা হোক, ২৫ নম্বর কোর্ট হাউস স্ট্রিটের সেই খুপরি ঘরে আমার সঙ্গে ‘ডাব্লিং’ করেই শুরু হয়েছিল কিংবদন্তি চলচ্চিত্রকার, কথাসাহিত্যিক, নাট্যকার, গীতিকার ও অভিনেতা আমজাদ হোসেনের দিগি¦জয়। ওখানে থেকেই আমজাদের ছবিতে প্রথম অভিনয়। পশ্চিম পাকিস্তানের বিখ্যাত চিত্রনির্মাতা এ জে কারদারের ‘জাগো হুয়া সাবেরা’ ছবিতে অভিনয় করেছিল আমজাদ। ওই ছবির নায়ক ছিলেন আনিস (প্রখ্যাত সঙ্গীতকার ও চিত্রনির্মাতা খান আতাউর রহমান), নায়িকা কলকাতার তৃপ্তি মিত্র। সঙ্গীত পরিচালক শহীদ আলতাফ মাহমুদ। চিত্রগ্রাহক ছিলেন হলিউডের অস্কার পুরস্কারপ্রাপ্ত ওয়াল্ট ল্যাসলি।
এরপর আর আমজাদকে ফিরে তাকাতে হয়নি। পরে ও সম্পৃক্ত হয় নাট্যপরিচালক ও ছবি নির্মাতা সালাউদ্দিনের সঙ্গে। ধারাপাত নাটক মঞ্চস্থ করে। পরে ধারাপাত সিনেমা হয়। এক সঙ্গে কাজ করে কাজী জহিরের সঙ্গে। খুব নাম হয়।
লেখালেখি, নাটক, সিনেমা- এসব নিয়ে মেতে থাকলেও পয়সাকড়ির তেমন আমদানি ছিল না। আমরা প্রায়ই সে সময়কার খ্যাতিমান ক্রীড়া ব্যক্তিত্ব এসএ মহসীনের (সাজু ভাই) আবাসস্থল গুলিস্তানের পেছনে তৎকালীন রমনা রেস্ট হাউসের ৩০ নম্বর রুমে যাতায়াত করতাম। সাজু ভাই রংপুরের কৃতী সন্তান। সে সময় পূর্ব পাকিস্তান স্পোর্টস ফেডারেশনের জেনারেল সেক্রেটারি ছিলেন। তখন পূর্ব পাকিস্তানের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন আতাউর রহমান খান। সাজু ভাই খান সাহেবের খুব প্রিয়পাত্র ছিলেন। সাজু ভাই তথা এসএ মহসীনের সময়ই বর্তমান বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামের ভিত্তিপ্রস্তুর স্থাপিত হয়েছিল। আমিও রংপুরের ছেলে বলে আমাকে খুব স্নেহ করতেন তিনি।
তো একদিন আমি সাজু ভাইকে আমজাদের অসুবিধার কথা বললাম। আমজাদও সে সময় উপস্থিত ছিল। বললাম, ওর একটা চাকরি দরকার। বলতে না বলতেই সাজু ভাই আমাকে সোজা বললেন, কাল বেলা ১১টার সময় ওকে নিয়ে আসবা। ঠিক ১১টায়। দেরি করবা না! আমরা পরদিন যথাসময়ে রমনা রেস্ট হাউসে সাজু ভাইয়ের দরবারে হাজির হলাম। দেখি তিনি তৈরি হয়ে আছেন। আমাদের দেখে সোজা তার জিপ গাড়িতে উঠে বসলেন। আমজাদের দিকে ইশারা করে বললেন, ওঠো!
আমজাদ সুবোধ বালকের মতো জিপ গাড়িতে উঠে বসল। আমি উঠতে যাব, বললেন, না তুমি এখানেই বসে থাক। আমরা আসছি। সাজু ভাই আমজাদকে নিয়ে বেরিয়ে গেলেন। আমি বসে থাকলাম রমনা রেস্ট হাউসের সেই কক্ষে। সাজু ভাইয়ের একজন সেবক ছিলেন, তার নামটা এখন আমার ঠিক মনে নেই। একবার দুই পিস টোস্ট বিস্কুট, এক গ্লাস পানি এবং একটু পরেই এক কাপ চা এনে দিলেন। চা খেয়ে অপেক্ষা করছি। সময় কাটে না। ঘড়ির কাঁটা তখন ২টার কাছে। জিপ গাড়ির শব্দ কানে এলো। গাড়ি থামতেই প্রথমে নেমে এলেন সাজুভাই। রুমে ঢুকে আমর শুকনো মুখের দিকে তাকিয়ে বললেন, হয়া গেছে!
হাসিমুখে আমজাদ ঘরে ঢুকল তার পরপরই। খুশিতে ডগোমগো হয়ে বলল, সচিবালয়ে নিয়ে গিয়েছিলেন সাজু ভাই। তার এক কথাতেই সিএন্ডবিতে আমার চাকরি হয়ে গেল! এভাবেই সরকারি চাকরিতে ঢুকে কর্মজীবন শুরু হয়েছিল আমজাদের। এরপর অনেকদিন ওই চাকরিতে বহাল ছিল। চাকরি তো নামেই। সকালে খাতায় সই করে বেরিয়ে পড়া। তারপর এফডিসি, নাটক, পত্রিকা অফিস, আড্ডা।
এক বছরের মাথায় জগন্নাথ কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করে আমি রংপুর ফিরে গিয়ে কারমাইকেল কলেজে বাংলা নিয়ে ডিগ্রিতে ভর্তি হলাম। রংপুর ফিরে যাওয়ার সময় মাসিক ১৫ টাকা ভাড়ার আমার সেই ছোট্ট ঘরটা আমজাদকে দিয়ে গিয়েছিলাম। সেই ১০ বাই ১৫ ফুটের কুঠরি থেকে বেরিয়ে কালক্রমে সে বিস্তৃত হয়েছে ছায়াছবির সৃজনশীল বিশাল জগতে।
আমার চোখের সামনে এখন কোর্ট হাউস স্ট্রিট, মতিমহল রেস্ট হাউস আর ১০ বাই ১৫ ফুটের ছোট্ট সেই ঘরটা। মনে বারবার ভেসে উঠছে প্রিয় বন্ধু আমজাদ হোসেনের মায়াভরা সেই মুখের ছবি। আমার বুকের কষ্টটা দু’ফোটা পানি হয়ে চোখের কোণে জমা হয়েছে।
রফিকুল হক দাদুভাই : প্রখ্যাত শিশুসাহিত্যিক ও সাংবাদিক

- মার্কিন ভিসা প্রক্রিয়া নিয়ে সুখবর
- ৪০ বছর ধরে অপেক্ষা করছি, আর নয়: এরদোগান
- পানি পানের সঠিক সময়
- যে কারণে ‘অ্যানিম্যাল’র পারিশ্রমিক কম নিয়েছেন রণবীর
- বিশ্বকাপে দলের সঙ্গে থাকবেন মাশরাফী!
- শেষ বিশ্বকাপ যেসব তারকাদের!
- সন্ত্রাসীরা কখনো সফল হতে পারবে না: এরদোগান
- একমুঠো বাদাম খেলে শরীরে যা ঘটে
- বিএনপির মধ্যে কোনো শিষ্টাচার নেই: হানিফ
- চলতি মাসেই শুটিংয়ে ফিরছেন পূর্ণিমা
- চলতি মাসেই শুটিংয়ে ফিরছেন পূর্ণিমা
- নোবেল পুরস্কার যেভাবে দেওয়া হয়
- কাকে ‘মীরজাফর’ বললেন সাকিবপত্নী শিশির
- ‘যুক্তরাষ্ট্রের ভিসানীতি নিয়ে পুলিশের উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই’
- ‘যুক্তরাষ্ট্রের ভিসানীতি নিয়ে পুলিশের উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই’
- আবারও বিয়ের পিঁড়িতে শাহরুখের নায়িকা মাহিরা খান
- রাজধানীতে হামলার জবাবে যা করল তুরস্ক
- আজ ইংল্যান্ডের মুখোমুখি হচ্ছে বাংলাদেশ
- মেক্সিকোতে ট্রাক উলটে ১০ অভিবাসী নিহত
- শিশুদের মনে বড় হওয়ার সাহস জাগাতে সরকার বদ্ধপরিকর: প্রধানমন্ত্রী
- অতিরিক্ত গরম হয়ে যাচ্ছে আইফোন ১৫, যা জানাল অ্যাপল
- হোয়াটসঅ্যাপে ‘নীল’ ভেরিফিকেশন চেকমার্ক চালু
- রাঁধুন খাসির মাংসের আখনি পোলাও, দেখুন রেসিপি
- সেপ্টেম্বরে রফতানি আয় ৪.৩১ বিলিয়ন ডলার, প্রবৃদ্ধি ১০.৩৭%
- হঠাৎ যে কারণে রেস্তোরাঁয় গেল বাবর বাহিনী
- হোটেলে রুম না পেয়ে অপেক্ষা করলেন পান্ডিয়া
- ভক্তকে ২ লাখ টাকা মূল্যের জুতা দিলেন বাদশা
- মেক্সিকোতে গির্জার ছাদ ধসে নিহত ৭
- ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে: এক মাসে টোল আদায় পৌনে ৭ কোটি টাকা
- মিশরে পুলিশ কমপ্লেক্সে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড
- ফরিদপুরে `দাফনের` পাঁচদিন পর জীবিত ফিরলেন গৃহবধূ
- বিকিনি পরা ছবি পোস্ট করে ট্রলের শিকার ঋতুপর্ণা
- তামিমকে না নেওয়ার গোপন রহস্য ফাঁস
- এবার সংসার নিয়ে ক্ষমা চাইলেন বুবলী
- কলকাতার নায়িকাকে নিয়ে কক্সবাজারে উড়াল দিলেন জায়েদ খান
- জেবার শুটিংয়ে ডিরেক্টরস গিল্ডের বাধা
- যশোরে বাণিজ্যিকভাবে ভারতীয় আঙ্গুর চাষ করে সফলতা
- বিচ্ছেদের ৬ বছর পর তাহসানকে কটাক্ষ করলেন মিথিলা
- অবিবাহিত হয়েও মা হচ্ছেন স্পর্শিয়া
- গায়ের চামড়া মোটা করেই কাজে নামতে হয়: কৌশানী মুখার্জি
- সারা-শেহনাজের অন্তরঙ্গ ভিডিও ফাঁস, সমকামী দুই অভিনেত্রী!
- ‘ভোরবেলা জানতে পারি আমাদের দোকান পুড়ে ছাই’
- প্রিয়াঙ্কাকে দীপিকার খোঁচা
- বুবলীর চাওয়া বীর শাকিবের মতো না হোক
- জাপানে কি করছেন জয়া? জেনে নিন পুরো ঘটনা
- খোলা পোশাকে ছবি দিতেই কটাক্ষের মুখে শ্রাবন্তী
- দীর্ঘ ১৮ বছরের সংসারের ইতি টানলেন অভিনেত্রী
- ঘনিষ্ঠ কমনীয় ভঙ্গিতে জয়া-স্বস্তিকা
- ‘রেড কার্পেট’ মাতালেন মিম
- সরে যাচ্ছে ঢাকার তিন বাস টার্মিনাল

- জেনে নিন, লিচুর আছে হাজারো গুণ!
- আমার প্রাপ্তি বেশি, বিসর্জন কম : সুবীর নন্দী
- নিজের কোনো চাওয়া নেই
- ‘করোনাকাল’ থেকে ‘বাসন্তীকাল’
- ‘এ ধরনের ভাইরাসের জিনোম সিকোয়েন্সিং বেশ জটিল’
- টেলিভিশনের আবেদন কমছে বলে আমার মনে হয় না
- প্রেম করেছি, প্রেমে পড়িনি
- আগামী দু-তিন বছর বিয়ের কোনো পরিকল্পনা নেই
- যারা ইংরেজিতে দুর্বল তাদের জন্যই সার্চ ইংলিশ : রাজীব
- আধুনিক বিশ্বের মতো উন্নত বিদ্যুৎ ব্যবস্থায় যাচ্ছে দেশ
- এলআরবিকে সহযোগিতা করতে দলে যুক্ত হয়েছি
- ‘পুরো গায়ে মাটি মেখে ৬ ঘণ্টা ফ্যানের নিচে ছিলাম’
- এইবার আমারে বিদায় দাও
- মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বুকে লালন করতে হবে
- মিডিয়া ক্যারিয়ার নিয়ে আমি সন্তুষ্ট: মিম