বুধবার   ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩   আশ্বিন ১১ ১৪৩০   ১২ রবিউল আউয়াল ১৪৪৫

  যশোরের আলো
৯৬

প্রাচীন রোমের নারীদের রূপচর্চার অদ্ভুত পদ্ধতি

প্রকাশিত: ১০ নভেম্বর ২০২২  

প্রাচীন রোমের মানুষদের কাছে সৌন্দর্যের বৈশিষ্ট্য ছিল ফর্সা বর্ণ, বাদামী চোখ। আর নারীদের অসাধারণ ফিগারের সঙ্গে স্বর্ণকেশী চুল। সেসময় সৌন্দর্য রক্ষার্থে সাজগোছ করার জন্য বিভিন্ন প্রসাধনী ও পদ্ধতি ব্যবহার করতো। 

তবে আজকেই দিনে যে কোনো সাধারণ মানুষ তা করতে পারে কিন্তু প্রাচীন রোমে আর আট দশটা সাধারণ মানুষ রূপচর্চা করতে পারতো না। প্রাচীন রোমের মেকআপ কেবলমাত্র ধনী শ্রেণীর নারীদের জন্য সংরক্ষিত ছিল। যদি কোনো নিম্ন শ্রেণির নারী মেকাআপ করতো তাহলে তাকে প্রায়শই তিরস্কার করতো মানুষজন। চলুন তবে জেনে নেয়া যাক আজ প্রাচীন রোমের মানুষদের রূপচর্চা বেশ কিছু পদ্ধতি সম্পর্কে- 

ত্বকের সৌন্দযের জন্য দুধ দিয়ে গোসল করতেন

প্রাচীন রোমে গায়ের রং ফর্সা হওয়ার গুরুত্ব ছিল বেশি, বিশেষ করে নারীদের জন্য। আর বেশিরভাগ পুরুষই বিয়ের জন্য ফর্সা ত্বকের নারীর খোঁজ করতো। আর তাই সূর্যের ক্ষতিকর রশ্মি থেকে ত্বককে রক্ষা করতে নারীরা বিশেষ যত্ন নিতেন। ত্বকে দাগ মুক্ত, বালি মুক্ত ও মসৃণ রাখতে নারীরা বাড়ির বাহিরে খুব একটা বের হতেন না। সারাদিন তারা বাড়ির অন্দরমহলেই কাটিয়ে দিতেন। আবার বের হলে তারা মুখে বিশেষ মাস্ক পড়ে বের হতেন।

বেশ কিছু ঐতিহাসিক গ্রন্থে উল্লেখ করা হয়েছে যে তারা মুখের উপর সালভ, আনগুয়েন্টস এবং তেলের ব্যবহার সাধারণ বিষয় ছিল। এই উপাদানগুলোর প্রতিটি একটি নির্দিষ্ট সুবিধার জন্য ব্যবহার করা হয়েছিল, বেশিরভাগ উপাদানগুলিকে মিক্স করে একটি পেস্ট তৈরি করে তা মুখে লাগিয়ে রাখতো। ধনী নারীরা তাদের ত্বকে যত্নের সঙ্গে দুধ ব্যবহার করতো, অনেক ধনী নারীরা আবার দুধ দিয়ে গোসল ও করতো। দুধে ত্বক সৌন্দর্য করার বৈশিষ্ট্য রয়েছে বলে কথিত আছে তাই সেসব কথা তারা সহজেই বিশ্বাস করতো।

প্রাচীন রোম কিংবদন্তি অনুসারে, সম্রাট নিরোর স্ত্রী পপ্পা সাবিনা এত বেশি পরিমাণে দুধ ব্যবহার করতেন যে যখনই তিনি ভ্রমণ করতেন তখন গাধার একটি বাহিনী তার সঙ্গে থাকত। বলা হয় যে তিনি দুধ এবং ময়দাযুক্ত তার নিজস্ব একটি রেসিপি তৈরি করতেন যা তিনি তার ত্বকে উপর প্রচুর পরিমানে প্রয়োগ করতেন।

চোখের মেআকাপ

বলা হয় যে উজ্জ্বল ঝকঝকে রংগুলো নারীরা তাদের চোখের আকার বাড়ানোর জন্য আইশ্যাডো হিসেবে ব্যবহার করতেন। রঙিন সবুজ, হলুদ এবং নীলগুলো প্রাকৃতিক খনিজ থেকে সূক্ষ্ম পাউডার তৈরি করা হয়েছিল এবং চোখের পাতায় প্রয়োগ করা হয়েছিল। একটি কাঠকয়লা ধূসর পাউডার চোখের রূপরেখার জন্য কোহল হিসেবে ব্যবহার করার জন্য দূরবর্তী দেশগুলো থেকে আনা হয়েছিল। এটা বলা হয় যে কোহল চোখের প্রাকৃতিক রং বাড়াবে এবং তাদের বড় এবং উজ্জ্বল দেখাবে।

কোহল জাফরান, ছাই, কাঁচ বা অ্যান্টিমনি থেকেও তৈরি করা হয়েছিল। এই সূক্ষ্ম পাউডারটি প্রয়োগ করার জন্য, হাড়ের কাঠিগুলোকে প্রায়শই তেল বা পানিতে ডুবিয়ে, তারপর কোহল পাউডারে ডুবিয়ে চোখের উপর ব্যবহার করা হতো। একজনের ভ্রুর মাঝখানে কালো কালি ব্যবহার করে প্রায়শই একটি ভ্রু আঁকা হযতো আর এটিকে প্রাচীনকালে সৌন্দর্যের চিহ্ন হিসেবে বিবেচনা করা হত।

চুল কোঁকড়া ও রং করা

প্রাচীন যুগের একটি প্রবাদ আছে, একজন নারীর সৌন্দর্য্য হচ্ছে তার চুল। আর তেমনি প্রাচীন রোমে নারীদের জন্য চুলের গুরুত্ব ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, তারা তাদের পছন্দসই চুলের ধরন পেতে অদ্ভুত সব কান্ড করেছেন। প্রাচীন রোমের নারীরা চুল কোঁকড়া করতে ব্রোঞ্জের রড ব্যবহার করতেন। এই ব্রোঞ্জের রড কে হালকা গরম করে তা দিয়ে চুল গুলোকে রোলিং করে দীর্ঘক্ষণ রাখা হতো। সঙ্গে অলিভ ওয়েল ও ব্যবহার করতো। আর যেহেতু সেসময় স্বর্ণকেশী এবং লাল চুলের উচ্চ চাহিদা ছিল, তাই তারা চলের উপর হালকা আস্তরণের রং ব্যবহার করতেন। এই রংগুলোর বেশিরভাগই শাকসবজি এবং প্রাণীজ পদার্থ থেকে প্রস্তুত করা হয়েছিল। আর সেই রংগুলো পানি এবং তেল দিয়ে ধুয়ে ফেলা যেতে পারতো।

সুন্দর হাসির জন্য চাই সুন্দর দাঁত

এ যুগের মানুষের কাঙ্ক্ষিত বহু জিনিসগুলোর মধ্যে একটি হচ্ছে ফকফকে সাদা দাঁত। প্রযুক্তির অগ্রগতির ফলে এখন সাদা দাঁত অর্জনের জন্য বিভিন্ন পদ্ধতি বিদ্যমান আছে। যাইহোক, প্রাচীন রোমানরা পশুর হাড়ের ছাই বা দাঁতের ছাই দিয়ে তৈরি তাদের নিজস্ব টুথপেস্ট তৈরি করত। যদি একজন ব্যক্তি একটি দাঁত হারিয়ে ফেলতেন, তাহলে সবচেয়ে ভালো হাতির দাঁত বা হাড় থেকে তৈরি একটি কৃত্রিম দাঁত একটি সোনার তারের মাধ্যমে তাদের মুখে পূঃণস্থাপন করা হতো।

সুগন্ধি ব্যবহার

প্রাচীন রোমানরা শরীরের দুর্গন্ধ কমাতে বিশেষ যত্ন নিতেন। আর নারীদের সুন্দর দেখানোর পাশাপাশি শরীর থেকে সুগন্ধি প্রস্ফুটিত হওয়া ছিল অতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। প্রাচীন রোমেও বিভিন্ন ধরনের সুগন্ধি তৈরি করা হয়েছিল, তাদের মধ্যে কিছু তরল পদার্থের ছিল। আর অন্যগুলো আঠালো কঠিন পদার্থের ছিল। এই সুগন্ধিগুলো ফুল এবং পাতা থেকে তৈরি করা হয়েছিল। জলপাই এবং আঙ্গুরের রস থেকে তৈরি অনফেসিওর ছিল পারফিউমের মূল উপাদান। আর সেই পারফিউম কে রঙিন করতে মেশানো হতো বিভিন্ন রং।

সূত্র: রোমা ওয়ান্ডার

  যশোরের আলো
  যশোরের আলো