শনিবার   ০২ ডিসেম্বর ২০২৩   অগ্রাহায়ণ ১৭ ১৪৩০   ১৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৫

  যশোরের আলো
সর্বশেষ:
নির্বাচন নিয়ে দেশি-বিদেশি নানা রকমের ষড়যন্ত্র চলছে’ যশোর-৪ আসন : আওয়ামী মনোনীত প্রার্থী এনামুল হকের বর্ধিত সভা নড়াইল-২ : মাশরাফির মনোনয়নপত্র জমা রোববার থেকে ফের ৪৮ ঘণ্টার অবরোধ বিএনপির ৪৬তম বিসিএসের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ, পদ সংখ্যা ৩১৪০ যশোর-৩ আসন : মনোনয়নপত্র জমা দিলেন এমপি নাবিল আহমেদ বাংলাদেশে মুক্তি পাচ্ছে না ‘অ্যানিমেল’
২২৬

মানবতাবিরোধী অপরাধে ৫ আসামির পক্ষে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন ১১ মে

বাঘারপাড়া প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ৮ মে ২০২৩  

মুক্তিযুদ্ধের সময় হত্যা, গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে করা মামলায় যশোরের বাঘারপাড়ার মো. আমজাদ হোসেন মোল্লাসহ পাঁচ আসামির বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষ হয়েছে। আসামিপক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের জন্য আগামী ১১ মে পরবর্তী দিন ধার্য করেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।

রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট রেজিয়া সুলতানা চমন বিষয়টি বৃহস্পতিবার (৪ মে) জাগো নিউজকে নিশ্চিত করেছেন।

ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. শাহিনুর ইসলামের নেতৃত্বে তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল এ আদেশ দেন। ট্রাইব্যুনালের অন্য দুই সদস্য হলেন বিচারপতি আবু আহমেদ জমাদার ও বিচারপতি কে এম হাফিজুল আলম।

আদালতে সেদিন রাষ্ট্রপক্ষের শুনানিতে ছিলেন প্রসিকিউটর মো. সাহিদুর রহমান। তার সঙ্গে ছিলেন প্রসিকিউটর রেজিয়া সুলতানা চমন। আসামি পক্ষে ছিলেন আইনজীবী গাজী এম এইচ তামিম ও অ্যাডভোকেট আব্দুস সাত্তার পালোয়ান।

রেজিয়া সুলতানা চমন জানান, এর আগে ২০১৮ সালের ১৬ এপ্রিল তদন্ত প্রতিবেদন চূড়ান্ত করে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা।

সংস্থার কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তদন্ত প্রতিবেদনের সার সংক্ষেপ তুলে ধরেন সংস্থাটির জ্যেষ্ঠ সমন্বয়ক এম. সানাউল হক। তিনি বলেন, ছয় খণ্ডের প্রতিবেদনে আসামিদের বিরুদ্ধে আটক, নির্যাতন, হত্যার চারটি অভিযোগ আনা হয়েছে। এটি তদন্ত সংস্থার ৬৩তম প্রতিবেদন।

আসামিদের মধ্যে গ্রেফতার হয়ে কারাগারে আছেন আমজাদ হোসেন মোল্লা (৭৭)। বাকিরা পলাতক।

সানাউল হক বলেন, মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে আসামিরা যশোরের বাঘারপাড়া চাঁদপুর গ্রামের মো. ময়েনউদ্দিন ময়না ও মো. আয়েনউদ্দিন আয়নাকে অপহরণের পর হত্যা করেছেন বলে তদন্তে উঠে এসেছে।

এছাড়া একই থানার ও একই গ্রামের ডা. নওফেল উদ্দিন বিশ্বাসকে আটকের পর হত্যা করেন আসামিরা। নওফেল মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের লোক ছিলেন। সাধারণ মানুষসহ আহত মুক্তিযোদ্ধাদের তিনি চিকিৎসা দিতেন।

তদন্ত সংস্থার জ্যেষ্ঠ সমন্বয়ক আরও জানান, বাঘারপাড়া থানার গাদইঘাট গ্রামের মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের লোক, মুক্তিযোদ্ধাদের সহায়তাকারী সুরত আলী বিশ্বাস ও মোক্তার বিশ্বাসকে অপহরণ করে আটকে রেখে নির্যাতনের পর হত্যা করেন আসামিরা। এছাড়া মাগুরার শালিখা থানার সীমাখালী বাজার ঘাটের মাঝি রজব আলী বিশ্বাসকে আটক করে হত্যা করেন তারা।

সানাউল হক বলেন এসব ঘটনায় আসামিদের বিরুদ্ধে যেসব তথ্য-প্রমাণ পাওয়া গেছে তার স্বপক্ষে সাক্ষীদের বক্তব্যও নেওয়া হয়েছে।

আটক আসামি আমজাদের পরিচয় তুলে ধরে সানাউল হক বলেন, যশোর বাঘারপাড়া থানার প্রেমচারা গ্রামের মৃত সোবহান মোল্লার ছেলে আমজাদ হোসেন মোল্লা বাঘারপাড়া থানার রাজাকার কমান্ডার ছিলেন। ১৯৭১ সালে মুসলিম লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন তিনি। বর্তমানে তিনি আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত।

তদন্ত কর্মকর্তা আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ২০১৬ সালের ৪ এপ্রিল এ মামলার তদন্ত শুরু হয়। যশোর জেলা প্রশাসকের দেওয়া রাজাকারদের তালিকাতেও এই পাঁচ আসামির নাম রয়েছে।

আসামিদের বিরুদ্ধে চার গুরুতর অভিযোগ হলো-

অভিযোগ-১। ১৯৭১ সালের ৩ ভাদ্র বেলা সাড়ে ১২টার দিকে, বাঘারপাড়া থানার উত্তর চাঁদপুর গ্রামের মো. ময়েনউদ্দিন ওরফে ময়নাকে তার বাড়ি থেকে আটক করে প্রেমচারা রাজাকার ক্যাম্পে নিয়ে যান মো. আমজাদ হোসেন মোল্লা ও তার সহযোগীরা। সেখানে তিনদিন আটকে রেখে নির্যাতন করে ৬ ভাদ্র দুপুর ১২টার দিকে খুড়দা গ্রামের বিজয় দাশের দেবদারু বাগানে কুয়ার পাশে দাঁড় করিয়ে মো. আমজাদ হোসেন মোল্লা গুলি করে হত্যা করেন ময়নাকে।

অভিযোগ-২। ১৯৭১ সালের ২০ জুলাই দুপুর ১টার দিকে আমজাদ হোসেন মোল্লা ও তার সহযোগীরা বাঘারপাড়া খাজুরা বাজার থেকে ডা. নওফেল উদ্দিন বিশ্বাসকে আটক করে প্রেমচারা রাজাকার ক্যাম্পে নিয়ে যান। পরদিন দুপুর ১২টায় তাকে থানা সদরের মহিরাম গ্রামের মাঠে গুলি করে করে হত্যা করা হয়।

অভিযোগ-৩। আমজাদ হোসেন মোল্লা ও তার সহযোগীরা ১৯৭১ সালের ২০ সেপ্টেম্বর সকাল ৮-৯টার দিকে মুক্তিযোদ্ধাদের সহায়তাকারী সুরত আলী বিশ্বাস, মোক্তার বিশ্বাসকে তাদের বাড়ি থেকে ধরে প্রেমচারা রাজাকার ক্যাম্পে নিয়ে তিনদিন নির্যাতনের পর ২৩ সেপ্টেম্বর দুপুর ১২টার দিকে খুড়দা গ্রামের বিজয় দাশের দেবদারু বাগানে কুয়ার পাশে দাঁড় করিয়ে গুলি করে হত্যা করে লাশ কুয়ায় ফেলে দেয়।

অভিযোগ-৪। মুক্তিযোদ্ধা ও শরণার্থীদের পার করে দেওয়ার কারণে মাগুরার শালিখা থানার সীমাখালী বাজার ঘাটের মাঝি রজব আলী বিশ্বাসকে ১৯৭১ সালের ১৫ আগস্ট আসামি আমজাদ হোসেন মোল্লা ও তার সহযোগীরা ধরে নিয়ে যায়। পরে প্রেমচারা গ্রামের চিনারাশি আম বাগানে নিয়ে রজব আলী বিশ্বাসকে গলা কেটে হত্যা করে আসামিরা।

  যশোরের আলো
  যশোরের আলো
এই বিভাগের আরো খবর