বুধবার   ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩   আশ্বিন ১১ ১৪৩০   ১২ রবিউল আউয়াল ১৪৪৫

  যশোরের আলো
৮২৫

ইউরোপ বনাম এশিয়ার ঈদ

নিউজ ডেস্ক:

প্রকাশিত: ২৯ মে ২০১৯  

মুসলিম উম্মাদের জন্য ঈদ অন্যন্য আনন্দের বার্তা।

সুখ, দুঃখ হাসি কান্নায় ভরা ঈদের উৎসবকে ঘিরে। ঈদের ঘোষণাটি কোন এক বিশেষ দিনের পথ ধরে ঈদের আনন্দের সুচনা হয়। এ দিনটিকে ঘিরে আবালবৃদ্ধ, শিশু-কিশোরসহ সব বয়সের মানুষের মনের মাঝে ভিন্ন এক অনুভূতি জাগ্রত হয়।

বছরে দুটি ঈদ ভিন্ন আমেজ নিয়ে আসে বিশ্বময় মুসলমানদের জন্য। পবিত্র রমজান মাস হলো ঈদের আগাম বার্তা। তাই সব শ্রেনীর মানুষ আলাদাভাবে প্রস্তুতি নিতে থাকে রোজার ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করে নিতে।

শাওয়াল মাসের চাঁদ দেখার ওপর নির্ভর করে পবিত্র রমজান মাস। চাঁদ দেখা নিশ্চিত হলে রোজা শুরু। এরপর শুরু হয় সিয়াম সাধনার আর সংযমের পথে চলা। রোজার একটি মাস পরম করুণাময়ের মহিমান্বিত অন্যতম একটি মাস।

প্রতি বছর আল্লার নৈকট্য লাভের আশায় সমগ্র মুসলিম জাতি অপেক্ষা করে। রোজার একটি মাস অতিক্রমের পর উঁকি দেয় ঈদের খুশি।

কিশোর বেলার ঈদঃ

সেই কিশোর বেলায় আমার কাছে ঈদের আগের রাতেই ঈদ মনে হত। কি যে আনন্দ মনে বয়ে যেত ভাষায় না প্রকাশ করা যায়। ঈদের আগের দিন রাতে শত চেষ্টা করে দুচোখের পাতা এক করতে পারিনা। কেন জানি ঘুমের ক্নান্তি শরীরে স্পর্শ করেনা। বিছানায় এদিক সেদিক গড়াগড়ি করে কখন যে মাঝ রাতের ঘন্টা বাজে টেরই পাইনা। পরের দিন ঈদ। ঈদের খুশিতে সব কিছু উলোট পালোট হয়ে যায়। তবুও সব কিছুতে দ্বিগুণ আনন্দের অনুভূতি ঈদকে ঘিরে। রমজান শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ঈদ নিয়ে যত সব করণীয় পরিকল্পনা বেড়ে যায়। এমনকি এক শ্রেনীর মানুষের কর্ম চাঞ্চল্য দ্বিগুণ বাড়তে থাকে। বিশেষ করে বাসাবাড়ির চাকচিক্য করা এবং তৈরি পোশাক কর্মীদের ব্যাপক চাহিদা বৃদ্ধি পেতে থাকে।

ছোটবেলার ঈদ ঘিরে থাকে ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনা যেন আনন্দের কোন কমতি নেই। এ আনন্দের মাঝে প্রাকৃতিক খুশির বার্তা বয়ে আনে। ঈদের রাতে পোষাক ঘরে এনে রাখা।

এরপর গভীর রাতে ঘুমিয়ে ভোরে উঠে গোসল সেরে ঈদের নামাজ আদায় করা সত্যি পরিপূর্ণ তৃপ্তি চলে আসে মনে। মনে পড়ে প্রায় বিশ বছর আগে মা যখন জীবিত ছিলেন ঈদের নামজের পূর্বে মিষ্টিমুখ অর্থাৎ সেমাই খেয়ে নামাজে যাওয়া যেন একটা সামাজিক রেওয়াজ। না খেলেও জোরপূর্বক খাওয়াতেন মা। এরপর নতুন পোষাক পড়ে সালামি নিতে অপেক্ষায় থাকতাম। বাবা মা আত্মীয় পরিবার পরিজন বড় সবাইকে সন্মান করলে টাকা হাতে তুলে দিতেন। সেই টাকা দিয়ে বাসা থেকে বের হয়ে যেতাম বন্ধুদের নিয়ে। কিছু খেতাম আর নাই খেতাম চটপটি না খেলে কেন জানি একটা অপরিপূর্ণতা থেকে যেত ঈদের দিন।

পাড়া-মহল্লা চষে বেড়াতাম। সবার বাসায় গিয়ে সেমাই খেতে খেতে একটা সময় আর খাওয়ার কোন রুচি থাকতনা। তারপর বাসায় এসে সামান্য বিশ্রাম নিয়ে বিকালে বের হতাম। যদি কোন ভাল ছবি ঈদে মুক্তি দিত তবে অবশ্যই তা দেখতাম।

হলে এতো ধাক্কাধাক্কির পরও টিকেট সংগ্রহ করে পছন্দের সিমেমাটি দেখে নিতাম। বিশেষ করে পুরান বাজার কোহিনূর সিনেমা, ছায়াবানী ও চিত্রলেখা। চাঁদপুরের এ তিনটি হল ছাড়াও হাজীগঞ্জ রনি সিনেমা এবং কুমিল্লায় ছবির নেশায় ছুটেঁ যেতাম। আরেক মজার বিষয় হলো তখন নদীতে গোসল করতাম। তার মজাই আলাদা। সব মিলিয়ে ছেলে বেলার ঈদ ছিল পরিপূর্ণ বিনোদনে ভরা। যা এখন শুধু স্মৃতি। তাছাড়া সেই আগের মতো আনন্দ পাইনা। গত বিশটি বছর মাকে ছাড়া ঈদ কাটাচ্ছি। তাই প্রতিটি ঈদে আনন্দের লেশমাত্র খুঁজে পাইনা। একটা সময় সালামি নিয়ে খুশি হতাম।

আর এখন সালামি দিয়ে খুশি হই।

এক যুগেরও বেশি প্রবাসে ঈদ করছি। বিদেশে অর্থের পিছুটান না থাকলেও আনন্দ উল্লাসের অনেক ঘাটতি রয়েছে যা কোনভাবেই পূরণীয় নয়। দেশের টানে নারীর টানে মন ছুটে চলে

সব সময় দেশের পানে। বিশেষ করে বিশেষ বিশেষ দিনগুলোতে দেশকে অনেক বেশি মনে পড়ে।

তখন নিজেকে বড্ড অসহায় একা মনে হয়। এরপর ইউরোপ মধ্যপ্রাচ্যের ঈদ আকাশ পাতাল ব্যবধান। কারন ইউরোপে তাদের নিজস্ব সংস্কৃতির বাহিরে একটি দিনও বন্ধ রাখেনা। আমরা যারা মুসলিম রয়েছি ঈদের দিনে কোন ছুটি থাকেনা। যার ফলে ঈদের নামাজটা পড়াও মুসকিল হয়ে যায়। তাই ঈদ উপলক্ষে কর্মস্থলে আগেই ছুটির জন্য বলে রাখতে হয় ঈদের নামজ পড়তে। নামাজ শেষে ফের কর্মস্থলে যেতে হয়। ঈদের কোন আনন্দ অনুভূত হয়না ইউরোপে। এদিক দিয়ে মধ্যপ্রাচ্যে

মুসলিম দেশগুলোয় কর্মজীবী বাংলাদেশিরা কিছুটা ঈদের আনন্দ পান।

কারন সব প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকে। ফলে বোধগম্য হয় ঈদ হচ্ছে। তবু সব কিছু মেনেই চলতে হয়। এগিয়ে যেতে হয় সামনের দিকে প্রবাস জীবনে। প্রবাসীদের এই কষ্ট যদি সরকার উপলব্ধি করতো তবে প্রবাসে থাকা বাংলাদেশি মিশনগুলোকে সঠিক দায়িত্বে পালনে আরও সচেষ্ট হতে বিশেষ নির্দেশ দিত। দুঃখ আর বেদনার আরেক নাম প্রবাসীদের ঈদ উদযাপন। তবু সবাই বোবা

কান্না নিয়ে জীবনের সব রঙ তামাশা বিলীন করে দিয়ে পরিবারের মুখে হাসি ফোটাতে রাত দিন পরিশ্রম করে।

দেশকে ভালবেসে দেশের উন্নয়নের ধারা ও ভাগ্য পরিবর্তনে আশায় মানসিক যন্ত্রণা নিয়ে এগিয়ে যেতে

সদা সচেষ্ট আমার মত অন্য প্রবাসী বাংলাদেশিরা।

লেখকঃ ইতালি প্রবাসী সংবাদকর্মী।

  যশোরের আলো
  যশোরের আলো