শুক্রবার   ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৩   আশ্বিন ৬ ১৪৩০   ০৬ রবিউল আউয়াল ১৪৪৫

  যশোরের আলো
৩০৯৫

কুল চাষ করে সফল কৃষক মোশারফ

নিউজ ডেস্ক

প্রকাশিত: ২ মার্চ ২০১৯  

যশোরের চৌগাছায় এক কৃষক বিভিন্ন জাতের কুল চাষ করে ব্যাপক সাফল্য পেয়েছেন। এরমধ্যে নতুন জাতের কাশ্মীরী আপেল কুল, বউ সুন্দরী, বল সুন্দরী অন্যতম। চলতি মৌসুমে এই কৃষক তিন বিঘা জমিতে এসব কুল চাষ করেছেন, যা ইতোমধ্যে বাজারজাত শুরু হয়েছে। কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগ না দেখা দিলে তিনি প্রায় ৫ লাখ টাকার কুল বিক্রি করবেন বলে জানান।

উপজেলার টেংগুরপুর গ্রামের কৃষক মোশারফ হোসেন। ১০-১২ বছর আগে তিনি রাজশাহী জেলা থেকে চৌগাছায় আসেন। বর্তমানে পৌরসভার গা ঘেঁষা টেগুরপুর গ্রামে কিছু জমি কিনে সেখানে কোন রকমে একটি বসতবাড়ি তৈরি করেছেন। মাঠে কোন জায়গা জমি নেই, অথচ এই কৃষক অন্যের জমি লিজ নিয়ে নানা ধরনের ফসলের চাষ করে আজ স্বাবলম্বী।

বর্তমান মৌসুমে কৃষক মোশারফ হোসেন ৩ বিঘা জমিতে বিভিন্ন জাতের কুল এবং ৮ বিঘা জমিতে চাষ করেছেন পেয়ারা। ইতোমধ্যে কুল উঠতে শুরু করেছে। চলতি মৌসুমে এই কৃষক ৩ বিঘা জমি থেকে ৫ লাখ টাকার কুল বিক্রি করবেন বলে আশা প্রকাশ করছেন। সরেজমিন তার ক্ষেতে গেলে দেখা যায় কুল উঠাতে ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষক দম্পতি।

এ সময় কথা হলে মোশারফ হোসেন জানান, ৯ মাস আগে তিনি জমিতে কুলের চারা রোপণ করেন। ৬ মাস বয়স থেকে প্রতিটি গাছে ফুল আসতে শুরু করে। এখন পরিপূর্ণ হয়েছে তাই বাজারজাত করার জন্য কুল তুলে প্রস্তুত করা হচ্ছে। প্রতিটি কার্টুনে কুল ভর্তি করে তা ঢাকায় পাঠানো হয়। এখন পাইকারি প্রতিকেজি কুল ৬০ থেকে ৭০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

কৃষক মোশারফ হোসেন বলেন, তিন বিঘা জমিতে ৫ জাতের কুল চাষ করেছেন। জাতগুলো হচ্ছে বউ সুন্দরী, কাশ্মীরী আপেল, বল সুন্দরী, নারিকেল ও দেশী আপেল কুল। ১ বিঘা জমিতে তিনি ২৭৫টি চারা রোপণ করেছেন। সে অনুযায়ী তিন বিঘায় ৮২৫টি চারা রোপণ করেছেন। একটি চারা থেকে আর একটি চারার দূরত্ব ৫ হাত। এর সুফল হচ্ছে কুল ক্ষেত পরিচর্চায় কোন সমস্যা হয় না। ইতোমধ্যে দেড় লাখ টাকার কুল বিক্রি হয়ে গেছে। কৃষক মোশারফ হোসেনের কোন নিজস্ব জমি জায়গা নেই, তাই অন্যের জমি লিজ বর্গা নিয়ে চাষাবাদ করেন। ওই কৃষক এখন বেশ স্বাবলম্বী।

তিনি জানান, কাশ্মীরী আপেল কুল দেখতে খুবই সুন্দর। এই কুলের চাষ এখনও সেভাবে বৃদ্ধি পায়নি। তাই বাজারে এর চাহিদা অনেক বেশি। রং আপেলের মতো সবুজ ও হালকা হলুদের ওপর লাল। স্বাদ মিষ্টি, অনেকটা বাউকুলের মতোই। তবে আপেলের থেকে কাশ্মীরী কুলের স্বাদ ভাল। তিনি জানান, সাধারণত আপেল কুল ও বাউকুল ৩০ থেকে ৭০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়। সেখানে নতুন জাতের এই সব কুল প্রথম দিকে ১০০ থেকে ১২০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। নতুন জাতের এই কুল নানা রোগে আক্রান্ত হতে পারে। তবে সময় মতো পরিচর্চা করলে তেমন কোন সমস্যা হয় না।

উল্লেখ্য, কুল মানব দেহের জন্য অত্যন্ত উপকারী ফল। তাই মৌসুমী এই ফল প্রতিটি মানুষের খাওয়া দরকার। বিশেষজ্ঞদের মতে, কুলে ভিটামিন-এ, ভিটামিন-সি, ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম, ম্যাগনেসিয়ামসহ আছে নানা কিছু। রোগ প্রতিরোধে যেমন ভূমিকা রাখে, অন্যদিকে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও বাড়িয়ে দেয়। তবে ডায়াবেটিকের রোগীদের জন্য কুল উপকারী নয়। পাকা কুলে চিনি থাকে তাই ডায়াবেটিসের রোগীদের পাকা কুল না খাওয়াই ভাল।

এছাড়া কুলের উপাদানগুলো শরীরে শক্তির জোগান দেয়, অবসাদ কেটে যায় দ্রুত। কুলে আছে এ্যান্টি অক্সিডেন্টস। এটি যকৃতে সুরক্ষা বর্ম তৈরি করে এবং ক্যান্সারের বিরুদ্ধেও লড়তে পারে। ত্বকের সুরক্ষায় কুল বিশেষ কাজ করে। কুল ক্ষুধাবর্ধক এবং হজমজনিত সমস্যার সমাধান করে। কুল একই সঙ্গে ক্যালসিয়াম ও ফসফরাসসমৃদ্ধ হওয়ায় হাড় গঠনে এবং দাঁতের সুরক্ষায় ব্যাপক ভূমিকা রাখে। তাই মৌসুমী এই ফল পরিমাণ মতো খাওয়া প্রতিটি মানুষের জন্য উপকারী।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রইচ উদ্দিন বলেন, কৃষক মোশারফ হোসেন কাশ্মীরী আপেলসহ নানা জাতের কুল চাষ করেছেন। উপজেলা কৃষি অফিস তাকে সার্বিক সহযোগিতা করে যাচ্ছেন। কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগ না এলে তিনি ব্যাপক সাফল্য পাবেন বলেও আশা প্রকাশ করেন এ কর্মকর্তা।

  যশোরের আলো
  যশোরের আলো
এই বিভাগের আরো খবর