বৃহস্পতিবার   ২৮ মার্চ ২০২৪   চৈত্র ১৩ ১৪৩০   ১৮ রমজান ১৪৪৫

চৌগাছার বিএনপির দুই নেতাকে রাজনৈতিকভাবে দেউলিয়া ঘোষণা  

নিউজ ডেস্ক

যশোরের আলো

প্রকাশিত : ১০:৩০ পিএম, ২১ জুলাই ২০২০ মঙ্গলবার

যশোরের চৌগাছা উপজেলায় বিএনপির দুই যুগ্ম আহবায়ক ইউনুচ আলী ও এমএ সালামকে রাজনৈতিকভাবে দেউলিয়া ঘোষণা করেছে উপজেলা বিএনপির আহবায়ক জহুরুল ইসলাম।

মঙ্গলবার (২১ জুলাই) সকালে উপজেলা বিএনপির কাঁচা বাজারস্থ কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এই দাবি করেন।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, সারা বিশ্ব যখন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে লক্ষ লক্ষ মানুষের মৃত্যুতে লাশের মিছিল, আমার প্রিয় জন্মভূমি বাংলাদেশও এর মধ্যে অন্তর্ভূক্ত। আমরা যখন মহান আল্লাহর কাছে পানাহ চাইতে চাইতে দিশেহারা ঠিক সেই সময়ে ১৮ জুলাই চৌগাছা উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক ইউনুচ আলী ও এমএ সালাম মিথ্যা বানোয়াট ভিত্তিহীন প্রতারণামূলক একটি সংবাদিক সম্মেলন করে চৌগাছাবাসীসহ সমস্ত জাতিকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করেছেন। আমার ইচ্ছা না থাকলেও দেশের এই ক্রান্তিকালে সাংবাদিক সম্মেলন করে জবাব দিতে বাধ্য হচ্ছি।

উপজেলা বিএনপির বিলুপ্ত কমিটির সভাপতি ও বর্তমান আহবায়ক জহুরুল ইসলাম বলেন, যশোর জেলা বিএনপির সিদ্ধান্ত মোতাবেক চৌগাছা উপজেলা কমিটি গঠনের লক্ষে ওয়ার্ড ও ইউনিয়ন বিএনপি কমিটি গঠনে গত বছরের ৫ ডিসেম্বর আমার এবং ইউনুচ আলীর যৌথ স্বাক্ষরে ২৭ ডিসেম্বর তারিখে উপজেলা সুখপুকুরিয়া ইউনিয়ন বিএনপি আহবায়ক কমিটি গঠনের লক্ষে বিলুপ্ত কমিটির সভাপতি/সম্পাদক সাহেবকে পত্র দেয়া হয়। সে অনুযায়ী নির্ধারিত তারিখে বিকাল ৩টায় কমিটি গঠনের কার্যক্রম শুরু হয়।

তিনি বলেন, কমিটি গঠনের সভার শুরুতে নির্বাচন প্রক্রিয়ার পদ্ধতি নিয়ে প্রতিদ্বন্দী দুই পক্ষের বিভিন্ন আলোচনা হয়। সভায় উপস্থিত স্বাক্ষরিত ৪৯ জন সর্বসম্মতিক্রমে একমত হন। ভোটাররা প্যানেল প্রধানকে দিয়ে প্যানেল বোঝাতে পারেন আবার ভিন্ন ভিন্ন ব্যক্তির নাম লিখে ভোট দিতে পারেন।

ভোটাররা উভয় পদ্ধতিতে ভোট প্রদান করেছেন। ভোটের ব্যলটে ইউনুচ আলী স্বাক্ষর করেছেন। ভোট শেষে গণনার পর ফলাফল ফর্দ্দতে আমি ও ইউনুচ আলী স্বাক্ষর করি। যে ভোটার লিখতে পারেন না সেই ভোটারের কিছু ভোট আমি সালাম সাহেবকে নিয়ে শুনে দিয়েছি এবং বাকি ২/১টি ভোট মাসুদুল হাসান (উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক ও হাকিমপুর ইউপি চেয়ারম্যান) ও এমএ সালাম আমার অনুমতি নিয়ে দিয়েছেন। আমি আমার ইচ্ছামত নিজের প্রার্থীর পক্ষে লিখেছি কথাটি নিলর্জ্জ মিথ্যাচার।

জেলা বিএনপির তদন্ত কমিটি আমার হাতের লেখা পরীক্ষা করে দেখেছেন আমার লেখা ভোট অধিকাংশ ইউনুচ আলীর পক্ষের প্রার্থী তার বেয়াই (ভাতিজার শশুর) কাজী আব্দুল হামিদ পেয়েছেন। ব্যলট সংরক্ষিত আছে। উভয় পক্ষকে ফলাফল ফর্দ্দ দেয়া হয় এবং প্রকাশ্যে শতশত নেতাকর্মীর সামনে মেয়াদ উত্তীর্ণ কমিটি বিলুপ্ত করে বিজয়ীদের নাম ঘোষণা করা হয়। যার ভিডিও সংরক্ষিত আছে। পরের দিন ঐ দুজনের অভ্যাস অনুযায়ী কোন কিছুর বিনিময়ে পরাজিতদের দিয়ে যশোর জেলা বিএনপির নিকট অভিযোগ দাখিল করেন। জেলা বিএনপি একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে দেন। তারা তদন্ত করে রিপোর্ট দেয়ার পর চলতি বছরের ১৯ মার্চ জেলা বিএনপি তাদের অভিযোগ খারিজ করে দিয়ে আহবায় কমিটি বহাল করে বিলুপ্ত কমিটির সাবেক সাধারণ সম্পাদক শরিফুল ইসলামকে যুগ্ম আহবায়ক হিসেবে অন্তর্ভূক্ত করার জন্য সুপারিশ করেন। 

এই সিদ্ধান্ত করোনাভাইরাস আক্রান্ত হওয়ার পূর্বের। তারপর থেকে ইউনুচ আলী ও এমএ সালাম তাদের গ্রহণকৃত কোনকিছু রক্ষার স্বার্থে গত ১৮ জুলাই তারিখে সম্পূর্ণ গঠনতন্ত্র পরিপন্থীভাবে আমার বিরুদ্ধে ১০০% মিথ্যা সংবাদ সম্মেলন করে আমাকে রাজনৈতিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন করেছেন। আমি জহুরুল ইসলাম বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) গঠন থেকে প্রতিষ্ঠাকালীন ছাত্রদলের থানা কমিটির সভাপতি ছিলাম। দুই বছর এই দায়িত্ব পালন করে সরাসরি উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হই। তখন জনাব ইউনুচ আলী ও এমএ সালাম জাতীয় পার্টির রাজনীতি করতেন। আমি প্রায় ৪০ বছর এই দলের সর্বোচ্চ পদে (উপজেলা পর্যায়ের) দায়িত্ব পালন করে আসছি। আমি এই দলটি আমার রক্তঘামে সংগঠিত করেছি। সেই দলের গঠনতন্ত্র পরিপন্থি কাজ করে বিশৃঙ্খলা করতে পারি, এটা অসুস্থ ব্যক্তি বক্তব্য ছাড়া কিছু নয়। বরং ইউনুচ আলী ও এমএ সালাম একটির পর একটি বিশৃঙ্খল কর্মকাণ্ড করে চলেছে। যেমন ৩০ বছরের নির্ধারিত দলীয় অফিস থাকা সত্বেও যত্রতত্র বিতর্কিত সভা করা। দলের আহবায়ক কোন প্রোগ্রাম করলে পাল্টা প্রোগ্রাম করা। দলের সিদ্ধান্তের বাহিতে সরকারি দলের পক্ষে প্রকাশ্যে ভোট করা। অছাত্রদের দিয়ে নিজেদের ইচ্ছামত পাল্টা ছাত্রদলে কমিটি করা। 

আহবায়ককে বাদ রেখে স্বরুপদাহ ইউনিয়নে পাগলের মত অবৈধ কমিটি ঘোষণা দেয়া। ইউনিয়ন আহবায়ক কমিটি গঠনের সময় প্রকাশ্যে সরকারি দলের সন্ত্রাসীদের সাথে নিয়ে সন্ত্রাস করা। চৌগাছা ইউনিয়ন কমিটি গঠনের সময় সরকারি দলের লোক দিয়ে সন্ত্রাস করা ও বিএনপির লোকদের অপহরণ করা। পাশাপোল, স্বরুপদাহ, নারায়নপুর, সুখপুকুরিয়া ইউনিয়ন কমিটি গঠনের সময় সরকারি দলের লোক দিয়ে সন্ত্রাস ও অপহরণ করা। সর্বপরি নিজেরা কর্মী বিচ্ছিন্ন হয়ে উপজেলা বিএনপি আহবায়কের বিরুদ্ধে সংবাদিক সম্মেলন করার সময় ছাত্রদল ও যুবদলের কর্মীদের উপস্থিত রাখা। 

এই ধরণের অসংখ্য বিতর্কিত কর্মকাণ্ড তারা করে চলেছে আমি উপজেলা ইউনিটের প্রধান হয়েও তাদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করি নাই। দল সিদ্ধান্ত দিয়েছেন সরাসরি ভোটের মাধ্যমে নেতা নির্বাচিত হবে। আমি ভাল কাজ করলে মহান আল্লাহর রহমতে ভোটাররা আমাকে নির্বাচিত করবেন। সে কারণে আমি তাদের এই সমস্ত বিশৃঙ্খলার বিরুদ্ধে ব্যবস্থার কথা ভাবি না। সুখপুকুরিয়া ইউনিয়ন বিএনপি আহবায়ক কমিটি গঠনতন্ত্র অনুযায়ী বৈধ ভোটে নির্বাচিত হয়েছে। কমিটির বিরুদ্ধে অভিযোগ তদন্তের কাজ সমাপ্ত হয়েছে এবং গত ১৯ মার্চ তারিখের পত্র অনুযায়ী বৈধ কমিটি। স্বরুপদাহ ইউনিয়ন বিএনপি কমিটি গঠন প্রক্রিয়া স্থগিত করা হয়। সেখানে পূর্ণাঙ্গ কমিটি বহাল রয়েছে। 

এ সময় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন পৌর বিএনপির আহবায়ক ও সাবেক পৌর মেয়র সেলিম রেজা আওলিয়ার, উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক ও পাতিবিলা ইউপি চেয়ারম্যান আতাউর রহমান লাল, যুগ্ম আহবায়ক ও হাকিমপুর ইউপি চেয়ারম্যান মাসুদুল হাসান, পৌর বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক ও পৌরসভার প্যানেল মেয়র সহিদুল ইসলাম, উপজেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম সম্পাদক বিএম আজিম উদ্দিন, উপজেলা বিএনপির আহবায়ক কমিটির সদস্য হুসাইন আহমেদ, কৃষকদলের কেন্দ্রীয় আহবায়ক কমিটির সদস্য ও উপজেলা বিএনপির সদস্য শফিকুল ইসলাম ওরফে ভিপি শফিক, পাতিবিলা ইউনিয়ন বিএনপির আহবায়ক আলী আকবার, যুগ্ম আহবায়ক আলমগীর হোসেন, কবির হোসেন বাবলু, খাইরুল ইসলাম, সুখপুকুরিয়া ইউনিয়ন বিএনপির আহবায়ক আবু মুসা, যুগ্ম আহবায়ক এসএম মিলন, হুমায়ন কবির স্বপন ও মিজানুর রহমান, জগদীশপুর ইউনিয়ন বিএনপির আহবায়ক অধ্যক্ষ মাওলানা রবিউল ইসলাম, যুগ্ম আহবায়ক মাস্টার মহিদুল ইসলাম, আব্দুল লতিফ লতা, চৌগাছা ইউনিয়ন বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক ইয়াকুব আলী, চৌগাছা ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সভাপতি তফিজ উদ্দিন, সিংহঝুলি ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক আনিছুর রহমান সরদার, পাশাপোল ইউনিয়ন বিএনপির আহবায়ক ড. জহুরুল ইসলাম, যুগ্ম আহবায়ক জিয়াউল ইসলাম জিয়া, স্বরুপদাহ ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মাস্টার সহিদুল ইসলাম, ধুলিয়ানি ইউনিয়ন বিএনপির আহবায়ক আব্দুর রাজ্জাক, ফুলসারা ইউনিয়ন বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক তরফদার আব্দুর রাজ্জাক, হাকিমপুর ইউনিয়ন বিএনপির আহবায়ক সাজ্জাদ হোসেন, যুগ্ম আহবায়ক তৈয়ব আলী, নারায়নপুর ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মজনুর রহমান, বিএনপি নেতা কপিল উদ্দিন, আবু সালাম প্রমুখ।