হাতুড়ির টুংটাং শব্দে মুখর যশোরের কামারশালা
যশোরের আলো
প্রকাশিত : ০৪:৩৫ পিএম, ৩১ জুলাই ২০২০ শুক্রবার
রাত পোহালেই কোরবানির ঈদ। তাই হাপরের ফাসফুস আর হাতুড়ির শব্দে মুখর যশোরের কামারশালাগুলো।
তবে করোনার মধ্যে এবারের দৃশ্যপট সম্পূর্ণ ভিন্ন। অন্যবারের তুলনায় এ বছর কোরবানির আগের কামারবাড়ির সেই ব্যস্ততা নেই। করোনার সংক্রমণ দেশের অর্থনৈতিক অবস্থার করুন দশা করে ছেড়েছে। আর তার ছাপ পড়েছে কামারবাড়ির কাজকর্মেও। ফলে প্রতিবারের ন্যায় চাপাতি, দা-বটি, ছুরি-চাকু তৈরির ফরমায়েশ এবার খুব বেশি নেই।
তারপরও কামারবাড়িতে কাজের চাপ একেবারে নেই এমনটি নয়। এবারও কমবেশি অনেকেই পশু কোরবানির প্রস্তুতি নিয়েছেন। তাই তাদের অনেকেই এখন পশু জবাই ও মাংস কাটাকাটির সরঞ্জাম বানানোর জন্য কামারবাড়ি ছুটছেন।
আবার অনেকে ছুরি, চাকু, চাপাতিতে ধার কাটাতে আসছেন। তবে অন্যান্যবার ঈদের সপ্তাহখানেক আগেই কামারবাড়ি মহাব্যস্ত হয়ে উঠত। খদ্দেরদের ফরমায়েশ সামলাতে গিয়ে এমন সময়ে এসে কামারবাড়ির লোকদের হিমশিম খেতে হতো।
সম্প্রতি সরেজমিনে যশোর শহর শহরতলীর বিভিন্ন কামারবাড়ি ঘুরে এখানকার কারিগরদের নতুন দা, বটি, ছুরি, চাকু, চাপাতি বানাতে দেখা যায়। ফি-বছর এই সময়টায় যতটা ভিড় এবার তেমনটা নয়। তারপরও কাজের কমবেশি ফরমায়েশ আসছে। আর সেসব নিয়ে ব্যস্ত থাকছেন কামারশালার কারিগররা। ফলে সেই ভিড়, কর্মব্যস্ততা না থাকলেও কাজে ডুবে আছেন তারা।
কামারবাড়ি গেলে এবারও চোখে পড়ছে লোহায় হাতুড়ি পেটানোর দৃশ্য। হাতুড়ি পেটায় টুংটাং-ঠুংঠাং আওয়াজ উঠছে। খসখস-ঘসঘস শব্দ তুলে চলছে দা, বটি, ছুরি, চাকু, চাপাতির ধার তোলা। এসবের সঙ্গে সমানে চলছে হাপরের একটানা ওঠানামা। কাঠ কয়লার আগুন ফুঁসে উঠছে হাপরের টানে। গণগণে সেই আগুনে পুড়ছে লোহার টুকরো। পুড়ে টকটকে লাল হয়ে ওঠা লোহায় অবিরাম হাতুড়ি মেরে দা, বটি, ছুরি, চাকু, চাপাতি গড়ছেন কামারেরা।
জানা গেছে, এক কেজি ওজনের একটি চাপাতি তৈরির দাম ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা। দা ও বটি ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা। পশুর চামড়া ছিলানোর জন্য ছোট আকারের চাকুর দাম ১২০ থেকে ১৫০ টাকা। জবাইয়ের ছুরি ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা। এছাড়া চাপাতিতে ধার কাটাতে ১০০ টাকা, ছোট আকারের চাকুর জন্য ৩০ টাকা, জবাইয়ের বড় ছুরি ৫০ টাকা, দা ও বটির জন্য ৫০ টাকা মজুরি নেওয়া হচ্ছে।
এদিকে বরাবরের মতো এবারও ক্রেতাদের দাবি, গত বছরের তুলনায় সব কাজে দাম বেশি ধরা হচ্ছে। কিন্তু কামারদের দাবি লোহার, কয়লার দাম ও কারিগরদের মজুরি আগের থেকে অনেক গুণ বেড়েছে। সেই অনুপাতে দাম খুব সামান্যই বাড়নো হয়েছে।
যশোর শহরতলীর চাঁচড়া। এখানকার আখের আলীর কামারশালায় চাপাতি বানাতে এসেছিলেন চাঁচড়ার ভাতুড়িয়রা’র তরিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, অন্যবারের চেয়ে ছুরি, চাকু ও চাপাতির দাম বেশি ধরা হচ্ছে। তবে কামার আখের আলী বলেন, লোহার দাম এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি। ঝুঁড়ি প্রতি কয়লার দামও বেড়েছে। এছাড়া কারিগরদের মজুরিও বেশি দিতে হয়। যার জন্য সবকিছুর দাম একটু বাড়ানো হয়েছে। তবে সেটি খুব বেশি নয়।
এদিকে শহরের রেলস্টেশন এলাকায় কৃষ্ণ কর্মকারের কামারশালায় গিয়ে খানিকটা ভিড় দেখা যায়। আলাপচারিতায় তিনি জানান, এবছর কাজের চাপ অন্যবারের তুলনায় অনেক কম। তবে গত কয়েকদিন ধরে ছুরি, চাকু, চাপাতি, দা তৈরির ফরমায়েশ আসছে। শেষদিকে এসে অনেকেই এসব বানানোর ফরমায়েশ দিচ্ছেন। আবার অনেকে ধার কাটাতেও দিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু প্রতিবছর এই সময় যেমন কাজের থাকে এবার তেমনটা নেই।