বৃহস্পতিবার   ২৮ মার্চ ২০২৪   চৈত্র ১৩ ১৪৩০   ১৮ রমজান ১৪৪৫

মণিরামপুরের আলোচিত দেবী হত্যার রহস্য উন্মোচন

নিউজ ডেস্ক

যশোরের আলো

প্রকাশিত : ০৪:৪১ পিএম, ৯ এপ্রিল ২০২১ শুক্রবার

যশোরের মণিরামপুর উপজেলায় আলোচিত দেবী টিকাদার (৩৭) হত্যা মামলার রহস্য উন্মোচন করেছে পুলিশ। প্রেমের ফাঁদে ফেলে বারবার টাকা দাবি করায় তাকে হত্যা করে তার পরকীয়া প্রেমিক এবং চরমপন্থী দলের সদস্য পাচু বিশ্বাস।

বুধবার (৭ এপ্রিল) রাত ১০টার দিকে খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার ষোলগাতিয়া গ্রামের আত্মীয় বাড়ি থেকে পাচুকে গ্রেফতার করে পুলিশ। 

পুলিশ জানায়, এ বিষয়ে বৃহস্পতিবার (৮ এপ্রিল) যশোর জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক মামুনুর রহমানের কাছে এই হত্যাকাণ্ডের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন পাচু বিশ্বাস। জবানবন্দিতে পাচু বিশ্বাস জানান, চাহিদামতো টাকা দিতে না পারায় তাকে পুলিশে ধরিয়ে দেওয়ার হুমকি দেন দেবী টিকাদার। এ কারণে চাকু দিয়ে তাকে হত্যা করেন তিনি। জবানবন্দি শেষে তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন বিচারক মামুনুর রহমান। 

এর আগে বুধবার রাতে খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার ষোলগাতিয়া গ্রামের আত্মীয় বাড়ি থেকে পাচুকে গ্রেফতার করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা যশোর জেলা গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) মফিজুল ইসলাম। এরপর তার দেয়া তথ্য মতে, মণিরামপুরের কুচলিয়া গ্রামের একটি পুকুর থেকে দেবী টিকাদারকে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত চাকু উদ্ধার করা হয়।

এ বিষয়ে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মফিজুল ইসলাম জানান, গত ৩ এপ্রিল রাত আটটার দিকে কে বা কারা মোবাইল ফোনে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে যায় মণিরামপুর উপজেলার কুচলিয়া গ্রামের পীযুষ টিকাদারের স্ত্রী এক সন্তানের জননী দেবী টিকাদারকে। তিনি নিখোঁজ থাকার দুইদিন পর ৫ এপ্রিল সকাল নয়টার দিকে একই এলাকার মুকুন্দ সরকারের স্ত্রী রেখা সরকার আম কুড়াতে তাদের পুকুরপাড়ে গেলে দেবী টিকাদারের লাশ দেখতে পান। তার বুকসহ শরীরের বিভিন্নস্থানে ধারালো অস্ত্রের আঘাতের চিহ্ন ছিল।

লাশ উদ্ধারের দিনই নিহতের স্বামী পীযুষ অজ্ঞাতনামাদের আসামি করে মণিরামপুর থানায় মামলা করেন। মামলাটি ক্লুলেস হওয়ায় জেলা পুলিশ সুপার প্রলয় কুমার জোয়ারদার হত্যার রহস্য উদ্ঘাটন ও জড়িত আসামিকে গ্রেফতারের জন্য ডিবি পুলিশকে তদন্তের দায়িত্ব দেন। দায়িত্ব পাওয়ার পর হত্যার রহস্য উদ্ঘাটনে মাঠে নামে ডিবি পুলিশ। পরে তথ্য প্রযুক্তির সাহায্যে গত বুধবার রাত ১০টার দিকে খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার ষোলগাতিয়া গ্রামে অভিযান চালিয়ে নিহতের প্রেমিক পাচু বিশ্বাসকে তার ভগ্নিপতির বাড়ি থেকে গ্রেফতার করা হয়। এরপর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে দেবী টিকাদারকে হত্যার কথা স্বীকার করেন পাচু। পরে তারই স্বীকারোক্তিতে বুধবার দিবাগত রাত আড়াইটার দিকে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত একটি চাকু কুচলিয়া গ্রামের মুকুন্দ সরকারের পুকুর থেকে উদ্ধার করা হয়।

এসআই মফিজুল আরও জানান, পীযূষকান্তি টিকাদারের স্ত্রী থাকা অবস্থায় দেবী টিকাদারের সঙ্গে পাচু বিশ্বাসের প্রেমজ সম্পর্ক গড়ে ওঠে। পরে তারা গোপনে বিয়ে করেন। এরপর দেবীকে নিয়ে পাচু অন্যত্র চলে যান। দুই বছর একসঙ্গে থাকার পর তারা নিজ নিজ বাড়ি ফিরে আসেন। কিন্তু পাচুর সঙ্গে দেবীর সম্পর্ক রয়ে যায়।

এসআই জানান, গোপনে তারা বিভিন্ন জায়গায় দেখা করতেন। দেবী প্রায়ই পাচুর কাছে টাকা দাবি করতেন। ঘটনার দুই দিন আগে বৃহস্পতিবার পাচু চাহিদা মতো দেবীকে সাত হাজার টাকা দেন। এরপর শনিবার আবার দেবী তার কাছে পাঁচ হাজার টাকা দাবি করেন। কিন্তু পাচু তাকে দুই হাজার টাকা দেন। এতে দেবী ক্ষুব্ধ হয়ে পাচুকে পুলিশে ধরিয়ে দেওয়ার হুমকি দেন। এ ঘটনায় পাচু চাকু দিয়ে দেবীকে হত্যা করেন।