শুক্রবার   ২৯ মার্চ ২০২৪   চৈত্র ১৪ ১৪৩০   ১৯ রমজান ১৪৪৫

বাজেটে রেমিট্যান্স প্রণোদনা ৪ হাজার কোটি টাকায় উন্নীত

নিউজ ডেস্ক:

যশোরের আলো

প্রকাশিত : ০৪:২৯ পিএম, ৪ মে ২০২১ মঙ্গলবার

আরো বেশি করে রেমিট্যান্স আনতে চায় সরকার। এরই অংশ হিসেবে আগামী অর্থবছরে রেমিট্যান্স খাতে প্রণোদনার পরিমাণ এক হাজার কোটি টাকা বৃদ্ধি করা হচ্ছে। চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরে এই খাতে প্রণোদনা রয়েছে তিন হাজার ৬০ কোটি টাকা। আগামী অর্থবছরে তা বাড়িয়ে চার হাজার কোটি টাকায় উন্নীত করা হচ্ছে।

প্রবাসী বাংলাদেশীরা বৈধ উপায়ে রেমিট্যান্স পাঠালে বর্তমানে ২ শতাংশ হারে আর্থিক প্রণোদনা দেয়া হচ্ছে। আগামী অর্থবছরে তা বাড়িয়ে ৩ শতাংশ করারও চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে। বর্তমানে কেউ ১০০ টাকা রেমিট্যান্স পাঠালে তাকে ১০২ টাকা দেয়া হয়। আগামীতে তা এক টাকা বাড়িয়ে ১০৩ টাকা দেয়া হতে পারে। সরকার মনে করছে, এতে প্রবাসীরা আরো বেশি করে দেশে প্রণোদনা পাঠাতে উৎসাহিত হবে। আর এতে সমৃদ্ধ হবে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ। অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

উল্লেখ্য, অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল আগামী ৩ জুন জাতীয় সংসদে ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেট বক্তৃতায় প্রণোদনা বরাদ্দ বাড়ানোর ঘোষণা দেবেন বলে জানা গেছে।

এ ব্যাপারে অর্থমন্ত্রণালয়ের বাজেট সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেছেন, রেমিট্যান্স বাড়ানোর জন্য সরকারের পক্ষ থেকে গত দুই অর্থবছরে এ খাতে প্রণোদনা দিয়ে আসছে। ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে এ খাতে প্রণোদনা ছিল ৩ হাজার কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরে এই বরাদ্দের পরিমাণ ৩ হাজার ৬০ কোটি টাকা। এই অর্থ সরকারের পক্ষ থেকে ভর্তুকি হিসেবে দেয়া হচ্ছে। প্রণোদনা দেয়ার কারণে রেমিট্যান্স খাতে অভূতপূর্ব সাড়া পাওয়া গেছে। অর্থনীতির অন্য খাতের অবস্থা কিছুটা নাজুক হলেও রেমিট্যান্স প্রবাহ আমাদের সব আশা ছাড়িয়ে যাচ্ছে। চলতি অর্থবছরে আট মাসেই বরাদ্দের সবটুকু ব্যয় হয়ে গেছে। তাই আমরা এ খাতে বরাদ্দের পরিমাণ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আগামী অর্থবছরে এ খাতে বরাদ্দের প্রস্তাব করা হবে ৪ হাজার কোটি টাকা।

জানা গেছে, চলতি বছরের এপ্রিলে প্রবাসীরা ২০৬ কোটি ৭৬ লাখ ডলার দেশে পাঠিয়েছেন। বাংলাদেশী মুদ্রায় যার পরিমাণ প্রায় সাড়ে ১৭ হাজার কোটি টাকা। গত বছরের এপ্রিলে দেশে রেমিট্যান্স এসেছিল মাত্র ১০৯ কোটি ২৯ লাখ ডলার। সে হিসাবে এপ্রিলে রেমিট্যান্স প্রবাহে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৮৯ দশমিক ১৭ শতাংশ। বাংলাদেশের ব্যাংকের এক কর্মকর্তা এ বিষয়ে বলেছেন, রমজান ও দুই ঈদকে কেন্দ্র করে দেশে সবসময়ই রেমিট্যান্স প্রবাহে বড় ধরনের প্রবৃদ্ধি হয়। তবে এবারের প্রবৃদ্ধি অতীতের রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। গত বছরের এপ্রিলে রেমিট্যান্সে বড় ধস এ বছরের প্রবৃদ্ধিতে ভূমিকা রেখেছে বলে মনে হচ্ছে।

এ দিকে চলতি অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে (জুলাই-এপ্রিল) দেশে রেমিট্যান্স এসেছে ২ হাজার ৬৬ কোটি ৫৮ লাখ ডলার। এর আগে ২০১৯-২০ অর্থবছরের একই সময়ে ১ হাজার ৪৮৬ কোটি ৮০ লাখ ডলার রেমিট্যান্স দেশে এসেছিল। সে হিসাবে চলতি অর্থবছরের মার্চ পর্যন্ত দেশে রেমিট্যান্স প্রবাহ বেড়েছে ৩৯ শতাংশের বেশি। সূত্র জানায়, এপ্রিলে দেশে সবচেয়ে বেশি রেমিট্যান্স এসেছে ইসলামী ব্যাংকের মাধ্যমে। ব্যাংকটি একাই ৬০ কোটি ৩ লাখ ডলার রেমিট্যান্স এনেছে। অগ্রণী ব্যাংক ২১ কোটি ৫০ লাখ ডলার, ডাচ্-বাংলা ব্যাংক ২০ কোটি ২৮ লাখ ও সোনালী ব্যাংক ১২ কোটি ৮০ লাখ ডলার রেমিট্যান্স দেশে এনেছে।

রেমিট্যান্সে বড় প্রবৃদ্ধির কারণে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়ছে। বৈদেশিক রিজার্ভের পরিমাণ এখন ৪৪ বিলিয়ন ডলারের বেশি। মূলত রেমিট্যান্সে ঊর্ধ্বমুখিতার সূচনা হয় গত অর্থবছর থেকে। ২০১৯-২০ অর্থবছরে সরকার সর্বপ্রথম রেমিট্যান্স পাঠানোর ক্ষেত্রে ২ শতাংশ নগদ প্রণোদনা ঘোষণা করে। যে ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে দেশে রেমিট্যান্স আসে তারাই রেমিট্যান্স প্রাপকদের ২ শতাংশ নগদ অর্থ দিয়ে দেয়। পরে সরকারের পক্ষ থেকে এই দুই শতাংশ প্রণোদনা ভর্তুকি হিসেবে ব্যাংকগুলোকে দিয়ে দেয়া হয়। শুধু সরকারি ২ শতাংশ প্রণোদনাই নয়, বেশ কয়েকটি ব্যাংক এই দুই শতাংশ প্রণোদনা অতিরিক্ত আরো ১ শতাংশ অর্থ রেমিট্যান্স প্রাপকদের প্রদান করে আসছে।