কেশবপুরে মাছের ঘেরে ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলন অব্যাহত
নিউজ ডেস্ক
যশোরের আলো
প্রকাশিত : ১২:৩৮ পিএম, ৩১ জুলাই ২০২২ রোববার
যশোরের কেশবপুরে মৎস্য ঘেরে অবৈধভাবে ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলন অব্যাহত রয়েছে। শ্যালো মেশিন দিয়ে পানি উত্তোলন করে মাছ চাষ করা হলেও উপজেলার মৎস্য অফিসের কর্মকর্তারা এ বিষয়ে কিছুই জানেন না। তবে ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলন করে মাছ চাষ করার কোন বিধান নেই বলে জানিয়েছে মৎস্য অফিস। সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলেই নিবেন আইনগত ব্যবস্থা।
ভূগর্ভস্থ থেকে সেচ দিয়ে মৎস্য ঘেরে পানি উত্তোলন অব্যাহত থাকায় বর্ষা মৌসুমে আবারও ঘেরের পানি উপচে এলাকায় দেখা দেবে জলাবদ্ধতা। এমনটিই আশঙ্কা করছেন পানি নিষ্কাশন সংগ্রাম কমিটির নেতৃবৃন্দ। ভূগর্ভস্থ থেকে ঘেরে পানি উত্তোলনকারীদের বিরুদ্ধে দ্রুত আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা।
এলাকার প্রভাবশালী ব্যক্তিরা ২০০০ সালের দিকে বিলে মাছ চাষ করার জন্য ঘের শুরু করেন। ঘের মালিকরা ব্রিজ, কালভার্টের মুখ ভরাটসহ অপরিকল্পিত বেঁড়িবাধ দিয়ে পানি নিষ্কাশন পথ বন্ধ করে ফেলে। এরপরও তারা মাছ চাষের জন্যে শুষ্ক মৌসুমে শ্যালোমেশিন ও বৈদ্যুতিক সেচ পাম্প দিয়ে ভূগর্ভস্থ পানি তুলে বিল ভরাট করে। ফলে বর্ষাকালে যেনতেন বৃষ্টিতে ঘেরের পানি উপচে মানুষের বসত বাড়িতে উঠে যায়। এলাকায় দেখা দেয় কৃত্রিম জলাবদ্ধতা।
এলাকাবাসী জানায়, কৃষকের জমি হারি নিয়ে এসব মৎস্য ঘের করা হয়ে থাকে। প্রতিবছর বোরো আবাদের সময় হলে অধিকাংশ ঘের মালিকেরা ঘেরের পানি নিষ্কাশন করে। বিল থেকে ধান কাটা হয়ে গেলে আবার ১৫ বৈশাখের পর ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলন করে ঘেরে ভরে ফেলে।
সরেজমিন উপজেলার খতিয়াখালী বিলে গিয়ে দেখা যায়, মৎস্য ঘেরে শ্যালো মেশিন দিয়ে পানি উত্তোলন করা হচ্ছে। উপজেলার পাঁজিয়া এলাকার খলিলুর রহমান বলেন, গতবছর ঘেরে পানি উত্তোলন করে মাছ চাষ করায় বর্ষা মৌসুমে ঘেরের পানি উপচে পূর্বাঞ্চলের বাগডাঙ্গা, মনোহরনগরসহ ১৫টি গ্রাম পানিবন্দি হয়ে পড়ে। নেপাকাটি গ্রামের রাস্তার উপর পানি উঠে আসায় মানুষের ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছিল।
২৭ বিল পানি নিষ্কাশন সংগ্রাম কমিটির আহ্বায়ক বাবর আলী গোলদার বলেন, ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলন অব্যাহত থাকায় বর্ষা মৌসুমে ঘেরের পানি উপচে আবারও কৃত্রিম জলাবদ্ধতা দেখা দেবে। এতে উপজেলার পূর্বাঞ্চলের ২১টি গ্রামের মানুষকে পড়তে হবে বিপাকে। যারা অবৈধভাবে ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলন করছেন তাদের বিরুদ্ধে দ্রুত আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান তিনি।
জৈষ্ঠ্য মৎস্য উপজেলা কর্মকর্তা সজীব সাহা জানান, কেশবপুরে ৪ হাজার ৬৫৮টি মৎস্য ঘের রয়েছে। এসব ঘেরে চাষযোগ্য জমি রয়েছে প্রায় ৭ হাজার ৫০০ হেক্টর। ঘেরে ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলন করে মাছ চাষ করার কোন সুযোগ নেই। ইতিপূর্বে বৈদ্যুতিক সেচ দিয়ে ঘেরে পানি উত্তোলন করায় অসংখ্য সংযোগ পল্লী বিদ্যুৎ অফিস বিচ্ছিন্ন করে দেয়। তবে শ্যালো মেশিন দিয়ে ঘেরে পানি উত্তোলন করার কোন খবর তাদের কাছে নেই। সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলেই আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ঋতুরাজ সরকার বলেন, ভূগর্ভস্থ থেকে পানি উঠানোর কারণে যদি আর্সেনিক উপরে উঠে আসে সেক্ষেত্রে পরিবেশের বিপর্যয় ঘটবে। এতে মানুষের ক্ষতির আশংকা বেশি।