শুক্রবার   ২৯ মার্চ ২০২৪   চৈত্র ১৪ ১৪৩০   ১৯ রমজান ১৪৪৫

  যশোরের আলো
৫০২

আমরা গুজবে নয়, মুজিব আদর্শে বিশ্বাসী

প্রকাশিত: ৬ ডিসেম্বর ২০১৮  

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের মেধাবী শিক্ষার্থী সনজিত চন্দ্র দাস গত ৩১ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) ছাত্রলীগের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনা ঢাবি ছাত্রলীগের শীর্ষ দুই পদে নেতৃত্ব নির্বাচন করে দেয়ার প্রায় এক মাস হতে চললেও এখনো বিশ্ববিদ্যালয় ও হল শাখার কোনো কমিটি দেয়া হয়নি। কবে নাগাদ এসব কমিটি হচ্ছে এবং আসন্ন নির্বাচন সামনে রেখে ঢাবি ছাত্রলীগের নতুন নেতৃত্বের ভূমিকা কী হবে এসব বিষয়ে  খোলামেলা আলোচনা করেছেন ছাত্রলীগ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সভাপতি সনজিত চন্দ্র দাস।

 

প্রশ্ন : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) শাখা ছাত্রলীগের সভাপতির হওয়ার পর আপনার অভিজ্ঞতা ও চিন্তা-ভাবনা যদি আমাদের জানাতেন….।

 

উত্তর: প্রথমেই আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। কেননা তিনি আমার মতো একজন ক্ষুদ্র কর্মীকে ঐতিহ্যবাহী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতির গুরুদায়িত্ব অর্পণ করেছেন। এর আগে জগন্নাথ হল ছাত্রলীগের সভাপতি ছিলাম। আমি অন্য কোনো জগতের মানুষ বা প্রাণী নই। আমি নিন্মমধ্যবিত্ত পরিবার থেকে উঠে আসা একজন সাধারণ ছাত্র। আমি সভাপতি, আমি ক্যান্টিনে বসে খেতে পারব না। কোথাও দাঁড়িয়ে বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিতে পারবো না, ওয়েট ধরে রাখা লাগবে- এমন চিন্তাভাবনা আমার নেই। আমি চাই, যারা সবার সাথে মিশে থাকতে পারবে, সেরকম ছাত্রলীগ কর্মী। ছাত্রলীগ ও সাধারণ ছাত্রের মধ্যে পার্থক্য যেন না থাকে। আমিও একজন সাধারণ ছাত্র। যারা সাধারণ ছাত্রের সঙ্গে মিশতে পারবে না তাদের ছাত্রলীগ করার অধিকার নাই। আমরা দেখেছি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দেশের এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্তে মানুষের সঙ্গে মিশেছেন। আমরা চাই জাতির পিতার আদর্শ মেনে চলতে, তাঁর আদর্শকে ধরে রেখে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে।

 

 

 

হলের নেতৃত্বে থাকাকালে সবসময় ভালো কাজ করার চেষ্টা করেছি। এখন বৃহৎ পরিসরে কাজ করতে হবে। ভালো কাজ আর খারাপ কাজের মধ্যে বৃহৎ ও ক্ষুদ্র পরিসরে কোনো তফাৎ হয় না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের যে কোনো ধরনের সমস্যায় সহযোগিতা করতে আমি সবসময় প্রস্তুত। আমার কাছে শুধু ছাত্রলীগের কর্মী না, যে কেউ নির্দ্বিধায় আসতে পারে। আমি যতটুকু পারি ততটুকু সহযোগিতা করার চেষ্টা করব। তবে যারা দেশের বিপক্ষে ও দেশবিরোধী আমার কাছে তাদের স্থান হবে না। সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বার্থে যা যা করা প্রয়োজন তাই করব। বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বার্থে পদক্ষেপ নেয়ার ক্ষেত্রে কোনো ছাড় দেব না এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার পরিবেশ রক্ষার জন্য সর্বাত্মক সহায়তা করব। কোনোভাবেই বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ নষ্ট হতে দেবো না।

 

প্রশ্ন : আপনারা কবে নাগাদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও বিভিন্ন হল শাখা কমিটি ঘোষণা করতে পারবেন?

 

উত্তর : গোছালো কমিটি করতে গেলে একটু সময়ের প্রয়োজন হয়। আপনারা দেখেছেন এবার সম্মেলনের পর সবার সার্বিক খোঁজখবর নেয়া হয়েছে। তারপর আমাদের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। আমরাও যত দ্রুত সম্ভব বিশ্ববিদ্যালয় ও হল কমিটি দেয়ার চেষ্টা করবো। আমাদেরও একটু খোঁজখবর নিতে হবে। সবাইকে ছাঁকুনির মাধ্যমে কোনো ধরনের অভিযোগবিহীন ও যারা মুজিব আদর্শে বিশ্বাসী তাদের বাছাই করা হবে। এ বিষয়ে আমরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শে কাজ করব। হলগুলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের প্রাণ। বিশ্ববিদ্যালয় কমিটির বিভিন্ন পদ ও হল কমিটিতে আমরা চাইব, যোগ্য-পরিশ্রমী কর্মীদের মূল্যায়ন করতে। এতে কিছুটা সময়তো লাগবে।

 

প্রশ্ন : ঢাবি ছাত্রলীগের বিগত কমিটির অনেকের বিরুদ্ধে ছাত্রত্ব নেই, মাদকসেবন, ছিনতাই, চাঁদাবাজি, বিভিন্ন মামলায় অভিযুক্তসহ নানা অভিযোগ ছিল। এসব অভিযোগ থেকে মুক্ত থাকতে আপনারা কী ধরনের পদক্ষেপ নেবেন?

 

উত্তর : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের কোনো পদে মাদকসেবী, চাঁদাবাজ ও মামলার আসামিসহ অন্য কোনো ধরনের অপরাধের সঙ্গে জড়িত কেউ আসতে পারবে না। কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগও এ বিষয়ে সহমত পোষণ করেছে। আশা করি তারাও সেই কাজটি করবেন।

 

প্রশ্ন : গুজব ছড়ানো প্রতিহত করতে ঢাবি ছাত্রলীগ কী পদক্ষেপ নিয়েছে ও ভবিষ্যতে নেয়ার চিন্তা-ভাবনা করছে?

 

উত্তর : আমরা ইতোমধ্যে গুজব প্রতিরোধের জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি। যেমন ঢাবির শিক্ষার্থীরা ঈদের ছুটিতে বাড়ি যাওয়ার আগে তাদের অনুরোধ করে বলেছিলাম তারা যেন নিজ নিজ এলাকায় এ বিষয়ে মানুষকে সচেতন করে। যেহেতু আমরা সবাই বিবেকবান, তাই আমাদের ভেবেচিন্তে কাজ করা উচিৎ। যেটা সত্য, সেটাই প্রচার করা উচিৎ। অন্যায় হলে অবশ্যই প্রতিবাদ করবেন। তবে কোনটা সত্য আর কোনটা গুজব তা বুঝার জন্য কিছুটা সময় অপেক্ষা করে তারপর সোশ্যাল মিডিয়াসহ বিভিন্ন মাধ্যমে মন্তব্য করা উচিৎ। তাহলেই আমরা সবাই ভালো থাকতে পারবো। আগস্ট মাস শেষে গুজব ছড়ানো প্রতিহত করতে ও গুজবের বিরুদ্ধে সচেতনা বৃদ্ধির জন্য ঢাবি ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয়া হবে। আমরা মানুষকে এ বিষয়ে অবহিত করতে চেষ্টা করব যে, কেউ গুজবে কান না দেবেন না, গুজব প্রচার করে কাউকে বিপদে ফেলবেন না এবং নিজেও বিপদে পড়বেন না।

 

প্রশ্ন : সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন অরাজনৈতিক আন্দোলনকে সরকার পতন আন্দোলনে রূপ দেয়ার অপচেষ্টা হচ্ছে বলে অভিযোগ করছে ক্ষমতাসীন জোট। আশঙ্কা করা হচ্ছে, নির্বাচন সামনে রেখে এমন আন্দোলন আরো হতে পারে। সেক্ষেত্রে ঢাবি ছাত্রলীগ কী ভূমিকা রাখবে রাখতে পারে?

 

 

উত্তর : এ প্রসঙ্গে আমি বলতে চাই, যদি কেউ কোনো যৌক্তিক আন্দোলনের ডাক দেয়, তাহলে আমরা তাদের সঙ্গে থেকে তাদের বক্তব্য প্রধানমন্ত্রী পর্যন্ত পৌঁছে দেব। কিন্তু আন্দোলনকে ব্যবহার করে ফায়দা নেয়ার সুযোগ কাউকে দেয়া হবে না। ঢাবি ক্যাম্পাসে অসৎ উদ্দেশ্যের কোনো আন্দোলন চালিয়ে যাওয়া যাবে না। ক্যাম্পাসে তৃতীয় পক্ষ বা সুযোগসন্ধানীরা যাতে কোন ধ্বংসাত্মক কার্যক্রম চালাতে না পারে সে বিষয়ে সবাইকে সজাগ থাকতে হবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সব সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক সংগঠন দেশের স্বার্থে এক হয়ে সব ধরনের অপচেষ্টা রুখে দিতে নিরন্তর কাজ করে যাবো।

 

প্রশ্ন : আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন জোট ক্ষমতায় আছে প্রায় ১০ বছর হতে চললো। আগামী নির্বাচনেও কেন জনগণ ভোট দিয়ে এ জোটকে ক্ষমতায় আনবে?

 

উত্তর : জামায়াত-বিএনপির আমলে জনগণের ওপর বিভিন্ন ধরনের অত্যাচার করা হয়েছে। তারা যাদেরকে প্রতিপক্ষ মনে করেছে তাদের ওপরই হামলা করেছে, বাড়িঘর লুটপাট করেছে। ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত জামায়াত-বিএনপির বীভৎসতা দেখেছে জনগণ। তাদের সেই বীভৎসতা ১৯৭১ সালের পাক হানাদারদের আচরণকেও ছাড়িয়ে গিয়েছিল। তৎকালীন সময়ে বাংলাদেশ দুর্নীতিতে চ্যম্পিয়ন ছিল, আর এখন উন্নয়নে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পথে বাংলাদেশ। দেশের মানুষ আগের অনেক বেশি শিক্ষিত ও সচেতন। তারা দেখছেন দেশের উন্নয়ন হচ্ছে, দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। বর্তমান সরকার দেশে উন্নয়ন কর্মকাণ্ড ত্বরান্বিত করতে নিরন্তর কাজ করে যাচ্ছে। যেহেতু দেশের জনগণ তীক্ষ্ণ বুদ্ধির অধিকারী ও সচেতন সেহেতু আমরা আশা করি তারা দেশের উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রেখে সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ-দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ বিনির্মাণে আবারও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন জোটকে দেশসেবার সুযোগ দেবে।

 

প্রশ্ন : আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন জোট যেন আবারো জনগণের ম্যান্ডেট নিয়ে ক্ষমতায় আসতে পারে তার জন্য ঢাবি ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে কী কী ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণের চিন্তা-ভাবনা করছেন?

 

উত্তর : আমরা গুজবে নয়, মুজিব আদর্শে বিশ্বাসী। আমরা অসত্য কিছু প্রচার করবো না। আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকার দেশের যে অভূতপূর্ব উন্নয়ন করেছে সেটা সমগ্র বিশ্বকে হতবাক করেছে। ঢাবি ছাত্রলীগ সরকারের নানা উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের চিত্র জনগণের মধ্যে তুলে ধরবে। এক্ষেত্রে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের চিত্র প্রচার করবো। পাশাপাশি সরকারের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডের তথ্য সম্বলিত লিফলেট জনগণের দ্বারে-দ্বারে গিয়ে বিলি করবো। আমরা তাদের জানাব, আওয়ামী লীগ সরকার এ দেশের জন্য, জনগণের কী কী ধরণের উন্নয়নমূলক কাজ করেছে এবং ভবিষ্যতে আরো কী কী করবে। আশা করি দেশের মানুষ দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন হতে চাইবে না। সবাই চাইবে সামনের দিকে এগিয়ে যাক। আমাদের সবারই আশা, দেশ যেন একটি জঙ্গি রাষ্ট্রে পরিণত না হয়, অসাম্প্রদায়িক দেশ হিসেবে বিশ্বের বুকে আত্মপ্রকাশ করতে পারে। সাম্প্রদায়িকতাকে প্রতিহত ও পরাজিত করে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়তে আওয়ামী লীগের কোনো বিকল্প নেই।

 

প্রশ্ন : শোকের মাস আগস্ট। বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যাকারী কয়েকজন এখনও বিদেশে পলাতক। তাদের দেশে ফিরিয়ে এনে শাস্তি নিশ্চিত করতে আপনারা কী ধরনের কর্মসূচি পালন করেছেন বা ভবিষ্যতে করবেন?

উত্তর : ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সপরিবারে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার সঙ্গে জড়িত কয়েকজন খুনি এখনও বিদেশে পালিয়ে আছে। ছাত্রলীগ ইতোমধ্যে পলাতক খুনিদের দেশে ফিরিয়ে তাদের ফাঁসি কার্যকর করার দাবিতে মানববন্ধন কর্মসূচি পালনের পাশাপাশি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে স্মারকলিপি দিয়েছে। শোক দিবসের এক অনুষ্ঠানে আমি বলেছি, ‘আগামী বার যেন আমাদের এ ধরনের কর্মসূচি পালন করতে না হয়।’ এর আগেই জাতির পিতার খুনিদের দেশে ফিরিয়ে তাদের শাস্তি কার্যকর করতে হবে।

 

এ জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ সরকারকে আবারো অনুরোধ করবে। প্রয়োজনে খুনিদের দেশে ফিরিয়ে তাদের শাস্তির দাবিতে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলবো। আমরা সপরিবারে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার সঙ্গে জড়িত প্রত্যেকের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।

  যশোরের আলো
  যশোরের আলো
এই বিভাগের আরো খবর