বৃহস্পতিবার   ২৮ মার্চ ২০২৪   চৈত্র ১৪ ১৪৩০   ১৮ রমজান ১৪৪৫

  যশোরের আলো
১১৫

কালীতলার ‘ডিটেনশন’থেকে মুক্ত দেশের আমদানিকারকরা

নিউজ ডেস্ক

প্রকাশিত: ৪ আগস্ট ২০২২  

বাংলাদেশি আমদানিকারকরা মহাদুর্ভোগ হিসেবে পরিচিত ভারতের বনগাঁর কালীতলার জিম্মিদশা থেকে মুক্ত হলেন। ডিটেনশনের নামে সেখানে এক থেকে দেড়মাস পণ্যবাহী ট্রাক আটকে বাড়তি টাকা আদায়ের যে ফাঁদ এতদিন পাতা ছিল তা বাতিল করে ভারত সরকার চালু করেছে স্লট বুকিং অ্যাপস।
২৮ জুলাই থেকে চালু হওয়া অ্যাপসের মাধ্যমে যেকোনো স্থান থেকে অগ্রিম দশ হাজার টাকায় স্লট বুকিং করিয়ে দিনের দিন পণ্যবাহী ট্রাক প্রবেশ করানো যাবে বাংলাদেশে। এতে আমদানিকারকরা আর্থিক ক্ষতি থেকে রক্ষা পাবেন। সময় সাশ্রয় হবে। রক্ষা পাবে পণ্যের গুণগত মানও।  

বেনাপোল কাস্টমস, স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, আমদানিকারকসহ সংশ্লিষ্টরা ভারত সরকারের স্লট বুকিং অ্যাপস চালুতে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন। বলেছেন, দীর্ঘদিন থেকে যন্ত্রণাদায়ক একটি বিষয় থেকে মুক্তি পাওয়া গেলো। এর মাধ্যমে দেশে শিল্প পণ্যের উৎপাদনে গতিশীলতা তৈরি হবে। দামও কমে আসবে।

বেনাপোল স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের উপপরিচালক (ট্রাফিক) মামুন কবির তরফদার বলেছেন, কালীতলায় ডিটেনশন শূন্যের কোটায় নেমে এসেছে। এখন আর কোনো পণ্যবাহী ট্রাক বাংলাদেশে প্রবেশের আগে আটকে রাখা হয় না। স্লট বুকিং অ্যাপসের মাধ্যমে আগে থেকে বুকিং থাকায় ট্রাকগুলো দিনের দিন বাংলাদেশে প্রবেশ করছে। এর মাধ্যমে আমদানিকারক-রপ্তানিকারক উভয়েই ঘরে বসে পণ্যের অবস্থান সম্পর্কেও অবহিত হতে পারবেন।

বেনাপোল কাস্টমস হাউজের জয়েন্ট কমিশনার আব্দুল রশীদ মিয়া বলেন, ভারতীয় কর্তৃপক্ষ খুব অ্যাকটিভ। পণ্যবাহী ট্রাকগুলো সরাসরি বাংলাদেশে প্রবেশ করছে।

আমদানিকারক এবং সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টরা জানিয়েছেন, বাংলাদেশের গার্মেন্টস ও অন্যান্য শিল্পে ব্যবহৃত কাঁচামালের শতকরা ৮০ ভাগ আসে ভারতের বিভিন্ন রাজ্য থেকে। এসব পণ্যবাহী ট্রাক বুকিং দেয়ার সময় ওই দেশের রপ্তানিকারকরা প্রকৃত মূল্যের চেয়ে ডিটেনশন বাবদ বাড়তি মূল্য নেন। এই ডিটেনশন মানে হলো পণ্যবাহী ট্রাক বাংলাদেশে প্রবেশের আগে নির্দিষ্ট একটি সময় ওপারে আটকে থাকা। বন্দরে যানজটের ধুয়ো তুলে স্থানীয় একটি চক্র বনগাঁর কালীতলায় এই ডিটেনশন করায়। এর মেয়াদ ২০ দিন থেকে ৪৫ দিন পর্যন্ত হতে পারে।

ঢাকার আমদানিকারক ট্রান্সকম বেভারেজ লিমিটেডের সিনিয়র ম্যানেজার (কমার্শিয়াল) সাজ্জাদুর রহমান বলেছেন, এক কনসাইনমেন্ট মাল দেশে আসতে সময় লাগতো ৩০ থেকে ৪৫ দিন। বাড়তি সময়টা চলে যায় কালীতলার ডিটেনশন সেন্টারে। বেনাপোল বন্দরে কী পরিমাণ যানজট আছে, ট্রাকটি বাংলাদেশে প্রবেশ করার আগে কতদিন সময় লাগতে পারে স্থানীয় তথ্যের ভিত্তিতে রপ্তানিকারক তার ডিটেনশন চার্জ ট্রেডের মূল দামের সাথে যুক্ত করে নিতেন। এজন্য দশ হাজার ডলার পণ্যের দাম বেড়ে দাঁড়াতো ১২ থেকে ১৩ হাজার ডলারে। বাড়তি এই টাকা আমদানিকারককেই বহন করতে হয়।
যশোরের আমদানিকারক জাফরিং এন্টারপ্রাইজের ম্যানেজিং ডাইরেক্টর আজিজুল ইসলাম রিজু বলেন,ভারতের যে প্রান্ত থেকেই পণ্য আসুক তা বাংলাদেশে প্রবেশের আগে কোলকাতা বা বনগাঁর কোনো এক স্থানে আনলোড করা হয়। সেখান থেকে আবার লোড করে তা বাংলাদেশে পাঠানো হয়। এজন্য দিন ভিত্তিক চার্জসহ শ্রমিকের মজুরি ও অন্যান্য কাজে অতিরিক্ত টাকা গুণতে হয় আমদানিকারককে। আমদানি পণ্য কবে দেশে আসবে তারও কোনো হিসেব থাকে না। অনিশ্চয়তায় থাকতে হয়।

একই তথ্য দিয়েছেন বাংলাদেশ-ভারত চেম্বারের ডাইরেক্টর মতিয়ার রহমান এবং বেনাপোল আমদানি ও রপ্তানিকারক অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মহসিন মিলন। তারা জানান, আর্থিক ক্ষতি ছাড়াও অবৈধ এই ডিটেনশনের কবলে পড়া পণ্যগুলো খোলা আকাশের নীচে পড়ে থাকে। এতে পণ্যের গুণগত মান ও রং নষ্ট হয়। এসবেরও খেসারত দিতে হয় আমদানিকারককে। পণ্য সময়মতো না আসায় অনেক কারখানাকে মাঝেমধ্যে অলস সময় কাটাতে হয়। গার্মেন্টসগুলোর ক্ষেত্রে কাঁচামালের অভাবে উৎপাদন ব্যাহত হওয়ায় বায়ারের অর্ডার বাতিলের ঘটনাও ঘটে।

ট্রান্সকম বেভারেজ লিমিটেডের সিনিয়র ম্যানেজার (কমার্শিয়াল) সাজ্জাদুর রহমান বলেন, তারা সফট ড্রিংসের জন্য কার্বোনেটেড আমদানি করেন। ডিটেনশনের কারণে তারা বাধ্য হয়ে অনেক পণ্য সড়ক পথে এনে কোলকাতা থেকে নৌপথ ব্যবহার করে চট্টগ্রাম হয়ে আনেন। খুবই জরুরি প্রয়োজনে কিছু পণ্য এক-দু’দিনের মধ্যে আনতে হয়। সেগুলো বিমানে আনা ছাড়া উপায় থাকে না। এতে খরচ বেড়ে যায় চার থেকে পাঁচ গুণ।

বেনাপোল স্থলবন্দর হয়ে ভারত-বাংলাদেশ আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যের সাথে জড়িতদের অভিযোগ,ভারত থেকে পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে বনগাঁর কালীতলা একটা বড় বাধা। ডিটেনশনের নামে এখানে যেভাবে নাজেহাল হতে হয় তার খেসারত দিতে না পেরে অনেক আমদানিকারক বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে পণ্য আমদানি কমিয়ে দিয়েছেন। চলে গেছেন ভোমরা, সোনামসজিদ, হিলি বা অন্য কোনো বন্দরে। ফলে, আমদানি খরচ যেমন বেড়েছে, তেমনি বেড়েছে পণ্য আসার সময়ও। এর সার্বিক কুফল দেশের অর্থনীতিতেও নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। ফলে কালীতলার অস্তিত্ব বিলীন করে ভারতীয় সরকার যে স্লট বুকিং অ্যাপস চালু করেছে তা যেনো কোনো কারণে বাধার সৃষ্টি না হয় তারও দাবি জানিয়েছেন তারা।

বাংলাদেশ-ভারত চেম্বারের ডাইরেক্টর মতিয়ার রহমান বলেছেন, কালীতলার ‘মাস্তানি’ বন্ধ করার জন্য তিনিসহ অন্যান্যরা বারবার তাগিদ দিয়েছেন। কাস্টমস, বন্দর কর্তৃপক্ষসহ সরকারি প্রতিনিধিরা বিষয়টি গুরুত্বসহকারে নিয়ে ভারতীয় কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলেছেন। ভারতের কেন্দ্রীয় ও পশ্চিমবঙ্গ সরকার যে উদ্যোগ নিয়েছে তাতে আমদানিকারকদের আবার বেনাপোলমুখি করবে বলে আশা তার।
 

  যশোরের আলো
  যশোরের আলো
এই বিভাগের আরো খবর