শুক্রবার   ২৯ মার্চ ২০২৪   চৈত্র ১৪ ১৪৩০   ১৯ রমজান ১৪৪৫

  যশোরের আলো

ছালেহা খাতুনের জিরা চাষ, সাড়া ফেলেছে মেহেরপুরে

প্রকাশিত: ২৯ মার্চ ২০২৪  

দেশের সীমান্তবর্তী জেলা মেহেরপুরে প্রথমবারের মতো জিরা চাষ করে তাক লাগিয়েছেন ছালেহা খাতুন নামের এক নারী। প্রতিটি জিরা গাছ ভরে গেছে ফুলে ফুলে। হলুদ ফুলের দৃশ্য মন জড়াচ্ছে মাঠের অন্যান্য কৃষকদের। ভালো ফলন ও লাভের আশা করছেন তিনি। মেহেরপুরের মাটি ও আবহাওয়া জিরা চাষের উপযোগী। সম্ভাবনাময় মশলা জিরা আবাদ করতে বাণিজ্যিকভাবে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করছে স্থানীয় কৃষি বিভাগ।

সবজি খ্যাত জেলা মেহেরপুর। এ জেলার মাটি ও আবহাওয়া সবজিসহ সব ফসলের উপযোগী হওয়ায় প্রথম পরীক্ষামূলক জিরা চাষ করেছেন মেহেরপুর সদর উপজেলার ময়ামারি গ্রামের খাজা মিয়ার স্ত্রী ছালেহা খাতুন। নিকট আত্মীয়ের সঙ্গে জিরা চাষের গল্প শুনে তিনি আগ্রহী হয়ে ওঠেন। স্থানীয় একটি দোকান থেকে ইরানি জাতের ১০০ গ্রাম জিরার বীজ সংগ্রহ করেন। বাড়ির পাশের একটি ছয় শতক জমিতে জিরা বীজ বপন করেন। প্রথমে স্থানীয়রা হাসিঠাট্টা করলেও সপ্তাহ খানেক পর জমিতে জিরা গাছ দেখতে পান ছালেহা খাতুন। আস্তে আস্তে সেই গাছ বড় হয়ে ফুল দেখা দেয়। বর্তমানে প্রতিটি জিরা গাছ হলুদ ফুলে ভরে উঠেছে। জমি পরিচর্যা থেকে শুরু করে এ পর্যন্ত খরচ হয়েছে ৫ থেকে ৬ হাজার টাকা। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় খরচের তুলনায় অধিক পরিমাণ লাভের আশা করেছেন তিনি। এবার লাভ হলে আগামীতে বাণিজ্যিকভাবে আরও বড় পরিসরে জিরা আবাদের প্রত্যাশা তার।

জিরা চাষি ছালেহা খাতুন বলেন, আমার এক আত্মীয় আমাদের বাড়িতে বেড়াতে এসে আমাকে জিরা চাষের কথা বলেছিলেন। তার পরামর্শে বীজ সংগ্রহ করে জিরা চাষ শুরু করি। প্রথমদিকে মানুষ আমাকে হাসি ঠাট্টা করতো। আমিও হতাশ হয়েছিলাম। কিন্তুু না এখন আমার জমির জিরা গাছ ফুলে ফুলে ভরে উঠেছে। খরচ একেবারে কম। সেচ ও সার কম লাগে। রোগ বালাই তেমন দেখা দেয়নি। ভালো ফলন হবে আশা করছি। এ বছর ফলন পেলে আগামীতে আরও বড় পরিসরে জিরা আবাদ করব।

খাজা মিয়া বলেন, যখন প্রথম জিরা বীজ জমিতে বপন করি গ্রামের মানুষ আমাকে নিয়ে হাসি ঠাট্টা করতো। এখন তারাই আগামীতে জিরা আবাদ করতে উৎসাহ দিচ্ছেন।

সালেহা খাতুনের ভাই ইদ্রিস আলী বলেন, একজন নারীকে আমাদের দেশে ছোট করে দেখার সুযোগ নেই। ধীরে ধীরে নারীরাও কৃষিতে অগ্রসর হচ্ছে। তারই দৃষ্টান্ত আমার বোন সালেহা খাতুন। তাছাড়া আমাদের মেহেরপুর জেলায় মাটি ও আবহাওয়া জিরা আবাদের জন্য উপযোগী। কৃষি বিভাগ সার্বিক সহযোগিতা করলে আমদানি নির্ভর না থেকে নিজের দেশেই জিরা চাষ করা সম্ভব।

ছালেহা খাতুনের জিরা চাষ দেখে অনেকেই এখন আগ্রহী হচ্ছে স্বল্প খরচে অধিক লাভের আশায় জিরা চাষে। ইতোমধ্যে গ্রামের অনেকেই উদ্যোগ নিয়েছেন জিরা চাষে। অনেকেই আবার উন্নত জাতের জিরা বীজ সংগ্রহের জন্য কৃষি বিভাগের পরামর্শ নিচ্ছেন।

মেহেরপুর সদর উপজেলার উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা আশরাফুল ইসলাম বলেন, তেমন খরচ না করেই ৬ শতক জমিতে দেড় মণ জিরা উৎপাদন করতে পারবে বলে আমরা আশা করি। সেই সঙ্গে ছালেহা খাতুনকে কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে সব ধরনের সহযোগিতা দেওয়া হচ্ছে। আগামীতে অনেকেই জিরা চাষে আগ্রহের কথা জানিয়েছেন। আগামী বছর থেকে মেহেরপুরের অনেকেই জিরা চাষ করবেন। আমরাও আগ্রহীদের পরামর্শ ও কারিগরি সহায়তা দিতে পাশে আছি।

  যশোরের আলো
  যশোরের আলো
এই বিভাগের আরো খবর