শুক্রবার   ২৯ মার্চ ২০২৪   চৈত্র ১৫ ১৪৩০   ১৯ রমজান ১৪৪৫

  যশোরের আলো
৪২৮

নির্দিষ্ট এলাকার বাইরে কল কারখানা নয়

নিউজ ডেস্ক:

প্রকাশিত: ২০ সেপ্টেম্বর ২০২০  

পরিকল্পিত এলাকার বাইরে আর শিল্প কারখানা স্থাপন করতে দেবে না সরকার। এজন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা বাস্তবায়ন শুরু করেছে বিদ্যুত ও জ্বালানি বিভাগ। দেশের কৃষি জমি রক্ষা এবং শিল্প প্রতিষ্ঠান স্থাপনে শৃঙ্খলা সৃষ্টিতে এই উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।

পরিকল্পিত এলাকার বাইরেই শিল্পে বেশি বিদ্যুত সংযোগ দিয়েছে বিতরণ কোম্পানি। সারাদেশে দুই লাখ ২৯ হাজার ৮১২টি শিল্প সংযোগের মধ্যে মাত্র চার হাজার ৯০৫টি পরিকল্পিত শিল্প এলাকায়। বাকি দুই লাখ ২৪ হাজার ৯০৭টি বিদ্যুত সংযোগ পরিকল্পিত শিল্প এলাকার বাইরে। সরকার পরিকল্পিত এলাকায় শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার জন্য উদ্যোক্তাদের আহ্বান জানাচ্ছে। তবে শিল্পের এত বড় একটি অংশ থেকে যাচ্ছে অপরিকল্পিত এলাকায়। এতে শিল্পে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুত সরবরাহে কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে বিতরণ কোম্পানি। শিল্পের জন্য দুইভাবে জমি ছেড়ে দেয়াতে ক্রমান্বয়ে কমছে কৃষি জমি।

বিদ্যুত বিভাগ এবং বিতরণ কোম্পানি সূত্রে জানা গেছে, সারাদেশের শিল্প উদ্যোক্তাদের বেশির ভাগই পরিকল্পিত শিল্প এলাকার বাইরে বেশি শিল্প গড়ে তুলতে আগ্রহী। এ কারণে নিজেদের মতো করে শিল্প প্রতিষ্ঠানের জমি কিনে সেখানে কারখানা স্থাপন করছেন। এতে দুই ধরনের সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন। বলা হচ্ছে এর প্রথমটি হচ্ছে শিল্প স্থাপনের জন্য বিপুল পরিমাণ কৃষি জমি বিনষ্ট হচ্ছে। এতে ফসল উৎপাদনের জমি ক্রমান্বয়ে হ্রাস পাচ্ছে। অন্যদিকে সরকার পরিকল্পিত শিল্প পার্ক স্থাপন করছে। সেখানেও জমি অধিগ্রহণ করে শিল্পের জন্য প্লট বানিয়ে রাখা হচ্ছে। ফলে ওইসব জমিতেও আর ফসলের আবাদ হচ্ছে না।

অর্থনীতির বিকাশে শিল্প প্রতিষ্ঠান স্থাপন জরুরী হলেও তা স্থাপন কোথায় হচ্ছে কিভাবে বিস্তার ঘটছে এ বিষয়ে সুস্পষ্ট পরিকল্পনা প্রয়োজন। কিন্তু বিদ্যুত সংযোগের হিসাব বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় বেশির ভাগ শিল্প স্থাপন করা হচ্ছে অপরিকল্পিত এলাকায়। রাজধানী ঢাকাসহ দেশের সব জায়গাতেই এই একই চিত্র দেখা গেছে।

তবে সরকার এখন পরিকল্পিত এলাকায় শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার প্রতি বেশি মনযোগ দিচ্ছে। ঢাকার মধ্যেই হাজারীবাগে যুগের পর যুগ ধরে গড়ে ওঠা চামড়া শিল্প কারখানা ঢাকার অদূরে সাভারে সরিয়ে নিয়েছে। সেখানে শুরুতে কিছু সমস্যা হলেও ক্রমান্বয়ে সেগুলোর সমাধান হবে বলে আশা করা হচ্ছে। তবে এর বাইরে ওষুধ শিল্প, কেমিক্যাল শিল্পকে একই জায়গায় সরিয়ে নেয়ার দীর্ঘদিনের পরিকল্পনা রয়েছে। দেশে সব থেকে অপরিকল্পিতভাবে গড়ে উঠেছে তৈরি পোশাক কারখানা। দেশের বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের প্রধান এই খাতের কারখানাগুলো রাজধানী ঢাকা এবং চট্টগ্রামে অনেকটা অপরিকল্পিতভাবে গড়ে তোলা হয়েছে। এতে শহরাঞ্চলে মানুষের চাপ বাড়ায় দীর্ঘ যানজটসহ নানান সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে গত বছর ২০ অক্টোবর একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। ওই বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী যত্রতত্র শিল্প কারখানা স্থাপনে নিরুৎসাহিত করার নির্দেশ দেন। একই সঙ্গে গ্যাস, বিদ্যুত ছাড়াও অন্যান্য পরিষেবা যেন অপরিকল্পিত এলাকায় না দেয়া হয় সে বিষয়ে নির্দেশনা দেয়া হয়। গত ১২ জানুয়ারি এসব বিষয় উল্লেখ করে বিভিন্ন সংস্থাকে চিঠি দিয়ে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার বিষয়টি জানানো হয়।

বিদ্যুত বিভাগ সূত্র বলছে, অপরিকল্পিত এলাকায় যেসব শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে সেখানে চাইলেও নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুত সরবরাহ করা সম্ভব হচ্ছে না। সেখানে একই বিতরণ লাইনে সকলকে বিদ্যুত সরবরাহ করা হচ্ছে। কোথাও কোথাও নির্দিষ্ট কারখানার জন্য বিতরণ লাইন থাকলেও তার পরিমাণ খুব কম। সঙ্গত কারণে নির্দিষ্ট এলাকায় শিল্প প্রতিষ্ঠান স্থাপন করলে তাদের পৃথকভাবে বিদ্যুত সরবরাহ করার জন্য অবকাঠামো নির্মাণ করা হবে। এতে সেখানে কোন রকম লোডশেডিং করা হবে না।

বিদ্যুত বিভাগ সূত্র বলছে, ইতোমধ্যে নির্দিষ্ট পরিকল্পিত এলাকার শিল্প প্রতিষ্ঠানের জন্য এন মাইনাস ওয়ান প্রক্রিয়ায় বিদ্যুত সংযোগ দেয়ার চিন্তা করা হচ্ছে। এই পদ্ধতিতে একটি বিতরণ লাইন বন্ধ হলে আরেকটি বিতরণ লাইন দিয়ে আপনা-আপনি বিদ্যুত সরবরাহ শুরু হয়ে যাবে। এর মধ্যে অপর লাইনটি সংস্কার করে ঠিক রাখবে বিতরণ কোম্পানি। ফলে শিল্প মালিকরা কোন সময়ই বিদ্যুতের লোডশেডিংয়ের দুর্ভোগে পড়বে না। পৃথিবীর উন্নত দেশে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুত সরবরাহে এন মাইনাস ওয়ান প্রক্রিয়ায় বিদ্যুত সরবরাহ করা হয়।

এছাড়া এখন মোট বিদ্যুত কেন্দ্রের তিন ভাগের এক ভাগ চালালেই চাহিদা পূরণ করা সম্ভব। সঙ্গত কারণে পরিকল্পিত এলাকার শিল্পের জন্য পৃথক বিদ্যুত বরাদ্দ রাখাটাও কোন কঠিন বিষয় নয় বলে মনে করছে বিদ্যুত বিভাগ। এজন্য সকল পরিকল্পিত শিল্প পার্কে বিদ্যুতের অবকাঠামো স্থাপনের কাজও শুরু করেছে বিভিন্ন বিতরণ কোম্পানি।

বিদ্যুতের বাইরে জ্বালানি সংস্থানে গ্যাসের সংযোগ দেয়ার জন্যও নির্দেশনা রয়েছে সরকারের। এখন প্রতিদিন ৬০০ মিলিয়ন ঘনফুট এলএনজি আমদানি করা হচ্ছে। কিন্তু চাইলেই আরও ৪০০ মিলিয়ন ঘনফুট এলএনজি আমদানি করা সম্ভব। মহেশখালিতে যে দুটি এলএনজি টার্মিনাল রয়েছে তা দিয়ে প্রতিদিন এক হাজার মিলিয়ন ঘনফুট এলএনজি আমদানি করা সম্ভব। শিল্পে চাহিদা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে এলএনজি আমদানি বৃদ্ধির পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের।

জ্বালানি বিভাগ সূত্র জানায়, এর আগে শিল্পে সংযোগের জন্য বিশেষ কমিটির সুপারিশের দরকার হলেও এখন তা আর হচ্ছে না। কোম্পানিগুলো নিজের বোর্ডে আলোচনা করেই শিল্প সংযোগের অনুমোদন দিতে পারে। তবে এই সংযোগের ক্ষেত্রেও পরিকল্পিত শিল্প এলাকাকে প্রাধান্য দেয়া হচ্ছে।

  যশোরের আলো
  যশোরের আলো
এই বিভাগের আরো খবর