শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪   বৈশাখ ৫ ১৪৩১   ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

  যশোরের আলো
সর্বশেষ:
পর্যটন শিল্পের বিকাশে কুয়াকাটায় বিমানবন্দর নির্মাণের উদ্যোগ একীভূত হচ্ছে যশোরের ১৬টি সরকারি বিদ্যালয় অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি নিশ্চিতে পরিকল্পিত শিল্পায়ন করতে হবে ফের আশা জাগাচ্ছে লালদিয়া চর কনটেইনার টার্মিনাল দায়িত্বশীল ও টেকসই সমুদ্র ব্যবস্থাপনার আহ্বান পররাষ্ট্রমন্ত্রীর এক সফটওয়্যারের আওতায় সব সরকারি চাকরিজীবী
৩৩০

প্রস্তুত ভার্চুয়াল কোর্ট

প্রকাশিত: ১১ মে ২০২০  

ভার্চুয়াল কোর্ট চালুর মাধ্যমে অবশেষে দেশের বিচার বিভাগ প্রবেশ করতে যাচ্ছে নতুন এক অধ্যায়ে। এরই মধ্যে ভার্চুয়াল এই কোর্ট চালু করতে সব ধরনের প্রস্তুতি শেষ করেছে সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন। আইনি বাধা কাটাতে জারি করা হয়েছে অধ্যাদেশ। ভার্চুয়াল কোর্ট পরিচালনায় প্রশিক্ষণ নিয়েছেন সংশ্লিষ্ট বিচারপতিরাও। প্রস্তুতি নিয়েছেন রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তাসহ রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা। আর আগে থেকেই ভার্চুয়াল কোর্টের দাবিতে সরব তরুণ আইনজীবীরা রীতিমতো উচ্ছ্বাস জানিয়েছেন নতুন ধারার এই সিদ্ধান্তে।

সুপ্রিম কোর্ট সূত্রে জানা গেছে, ভার্চুয়াল কোর্টে অংশ নিতে আইনজীবীদের ভিডিও কনফারেন্সের লিংক পাঠানো হবে। এসএমএসে দেওয়া হবে অ্যালার্ট। নির্দিষ্ট সময়ে বিচারকসহ সংশ্লিষ্ট আইনজীবীরা যুক্ত হবেন ভিডিও কনফারেন্সে। আজ সোমবার (১১ মে) থেকেই ডিজিটাল পদ্ধতির এই আদালত ব্যবস্থা চালু হবে বলে জানা গেছে।

এর আগে, রোববার ভার্চুয়াল আদালত চালুর ক্ষেত্রে কিছু নির্দেশনা জারি করেছেন প্রধান বিচারপতি। আপিল বিভাগের একটি এবং হাইকোর্ট বিভাগের তিনটি বেঞ্চ তিনি শুনানির জন্য নির্ধারণ করে দিয়েছেন। কোন বেঞ্চ কোন বিষয়ের মামলাগুলো চালাবে, সেটিও উল্লেখ করে দেওয়া হয়েছে। আর নিম্ন আদালতে কেবল জামিন শুনানি করতে বলা হয়েছে ভার্চুয়াল আদালত ব্যবহার করে।

ভার্চুয়াল কোর্টের বিষয়ে আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক বলেন, প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার স্বপ্ন ছিল বাংলাদেশকে ডিজিটাল বাংলাদেশে রূপান্তর করা। সেই কাজ তিনি ১৯৯৬ সাল থেকে শুরু করেছিলেন। তারই আলোকে তিনি ই-জুডিশিয়ারি চালুর উদ্যোগ নিয়েছিলেন। এবারে ভার্চুয়াল আদালত চালুর মাধ্যমে বিচারিক প্রক্রিয়া ডিজিটাল যুগের নতুন অধ্যায়ে প্রবেশ করলো।

আইনমন্ত্রী বলেন, করোনাভাইরাসের কারণে আদালত সীমিতভাবে খোলা থাকলেও আদালতের সব কাজ প্রায় বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। এর মধ্যেও বিচারকাজ যেন থেমে না থাকে, সে কারণেই ভার্চুয়াল কোর্ট বসানোর পরিকল্পনা ছিল। সেটা করতেই আদালতের তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার অধ্যাদেশ ২০২০ জারি হয়েছে।

আইনজীবীরা বলছেন, আমাদের সংবিধান, ফৌজদারি ও দেওয়ানি কার্যবিধি, সাক্ষ্য আইন এবং আরও কিছু আইনে বলা আছে, আদালতে যখন বিচারকাজ চলবে, তখন সংশ্লিষ্টদের সশরীরে উপস্থিত থাকতে হবে। ভার্চুয়াল আদালত চালুর ক্ষেত্রে এটিই ছিল মূল প্রতিবন্ধকতা। নতুন অধ্যাদেশে সেই প্রতিবন্ধকতাই দূর করা হয়েছে। বলা হয়েছে, এই ভার্চুয়াল কোর্টের মাধ্যমে উপস্থিত থাকলে তাকে সশরীরে উপস্থিত থাকা বলে গণ্য করা হবে।

ভার্চুয়াল কোর্ট চালুর বিষয়ে জানতে চাইলে অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মুরাদ রেজা রোববার (১০ মে) রাতে বলেন, এই সময়ে ভার্চুয়াল কোর্ট পরিচালনায় যে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে এটি একটি যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত হয়েছে। সরকারের এ সিদ্ধান্তে আমি খুবই আনন্দিত। এজন্য প্রধান বিচারপতি ও আইনমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানাই।

তিনি বলেন, দীর্ঘ দিন ধরে আদালত বন্ধ রয়েছে। ভার্চুয়াল কোর্ট চালুর মাধ্যমে কিছুটা হলেও সেই বন্ধ দশার অবসান হবে। এর মাধ্যমে দেশের বিচার বিভাগ প্রকৃত অর্থে ডিজিটাল যুগে প্রবেশ করল বলেও মত দেন তিনি।

ভার্চুয়াল কোর্ট পরিচালনায় রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীদের প্রস্তুতি কেমন— জানতে চাইলে মুরাদ রেজা বলেন, ভার্চুয়াল কোর্টে মামলা পরিচালনায় আমরা প্রস্তুত রয়েছি। অ্যাটর্নি জেনারেলসহ রাষ্ট্রপক্ষের ১০/১২ জন আইনজীবী মিলে প্রশিক্ষণ নিয়েছি। ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ইউএনডিপি রোববার (১০মে) এ বিষয়ে আমাদেরকে প্রশিক্ষণ দিয়েছে। দুই থেকে তিন ঘণ্টা ধরে ভার্চুয়াল কোর্টে মামলা পরিচালনার বিষয়টি তারা আমাদের দেখিয়ে দিয়েছেন। বেশ কয়েকজন বিচারপতিও ছিলেন। সব মিলিয়ে বলা যায়, ভার্চুয়াল কোর্টের মাধ্যমে বিচার বিভাগ ডিজিটাল বিচার ব্যবস্থায় প্রবেশ করল।

দুর্নীতি দমন কমিশনের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান বলেন, সরকারের এ উদ্যোগকে আমি স্বাগত জানাই। অবশ্যই এটি ইতিবাচক একটি পদক্ষেপ। এটি আরও আগে হওয়া উচিত ছিল। দেরিতে হলেও এটি একটি ভালো উদ্যোগ বলে আমি মনে করি। কেননা করোনাভাইরাসের কারণে দীর্ঘ দিন ধরে আদালত বন্ধ। মনে হচ্ছে দেশে কোনো আদালতই নেই।

হাইকোর্টের তরুণ আইনজীবী শিহাব উদ্দিন খান বলেন, ভার্চুয়াল কোর্ট চালুর সিদ্ধান্ত সময়োপযোগী। এই সিদ্ধান্ত প্রশংসার দাবি রাখে। একইসঙ্গে এই আদালতের কার্যক্রমকে যথাসম্ভব সহজবোধ্য ও অংশগ্রহণমূলক করার দাবি জানান তিনি।

ভার্চুয়াল কোর্ট চালুর উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে নবীন আইনজীবী খাদেমুল ইসলাম বলেন, এটি আরও আগে চালু হওয়া দরকার ছিল। দেরিতে হলেও এটি একটি ইতিবাচক সিদ্ধান্ত। এখন দ্রুত ভার্চুয়াল কোর্ট চালু হওয়া দরকার। একইসঙ্গে ভার্চুয়াল কোর্টকে একটি কার্যকর আদালত হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে আইনজীবীসহ সংশ্লিষ্টদের যথাযথ প্রশিক্ষণের ব্যবস্থার দাবি জানাচ্ছি।

এর আগে, গত ৬ মে (বুধবার) ভিডিও কনফারেন্সসহ অন্যান্য ডিজিটাল মাধ্যমে আদালতের কার্যক্রম চালানোর সুযোগ তৈরি করতে ‘আদালত কর্তৃক তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার অধ্যাদেশ, ২০২০’-এর খসড়ায় নীতিগত ও চূড়ান্ত অনুমোদন দেয় প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে মন্ত্রিসভা। পরে সেটি অধ্যাদেশ আকারে জারি করতে রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। তাতে নীতিগত ও চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়ে সই করেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। এর মাধ্যমে জারি হয় অধ্যাদেশটি। পরে আইন মন্ত্রণালয় এ সংক্রান্ত গেজেট প্রকাশ করেছে।

  যশোরের আলো
  যশোরের আলো
এই বিভাগের আরো খবর