শুক্রবার   ২৯ মার্চ ২০২৪   চৈত্র ১৪ ১৪৩০   ১৯ রমজান ১৪৪৫

  যশোরের আলো
৩৮৪

সমাগত কোরবানি: প্রস্তুতিটা হোক বিশুদ্ধ নিয়তের মাঝ দিয়েই

নিউজ ডেস্ক:

প্রকাশিত: ২৩ জুলাই ২০২০  

সমাগত পবিত্র ঈদুল আজহা। ঈদুল আজহা মানেই কোরবানির ঈদ। ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় উৎসবের একটি ঈদুল আজহা। মুসলমানদের ঘরে ঘরে এখন ঈদ উৎসবকে বরণ করে নেয়ার প্রস্তুতি চলছে পুরোদমে।

গ্রাম কিংবা শহর, নগর সবখানেই শুরু হচ্ছে গরু ছাগলের জমজমাট হাটবাজার। কারণ ঈদুল আজহার অন্যতম একটা আমল বা বিধান হলো কোরবানি করা। (নির্দিষ্ট দিনে, নির্দিষ্ট পশু যথা সময়ে মহান আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্যেশে জবাই করাকে কোরবানি বলে)।

এ কোরবানি মহান আল্লাহ তায়ালার পক্ষ হতে বান্দার জন্য মস্ত এক নেয়ামত। এ নেয়ামতের পথ ধরেই বান্দা তার রবের নৈকট্য বা সান্যিধ্য লাভ করে থাকে।

হজরত আদম (আ.) এর সময় থেকে যুগযুগ ধরে পবিত্র কোরবানির বিধান চলে আসছে। এ সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘আমি প্রত্যেক উম্মতের জন্য কোরবানি নির্ধারণ করেছি। যাতে তারা আল্লাহর দেয়া চতুষ্পদ জন্তু জবাই করার সময় আল্লাহর নাম উচ্চারণ করে। (সূরা: হজ্জ, আয়াত: ৩৪)।

কোরবানির পশু জবাই বাহ্যিক একটা নিয়ম মাত্র; প্রকৃতপক্ষে মানুষের অন্তরের তাকওয়া ও ইখলাসটাকেই আল্লাহ তায়ালা গ্রহণ করে থাকেন। আর গোশত ও অন্যান্য জিনিস বান্দাকে নেয়ামত হিসেবে দান করে দেন। এ প্রসঙ্গে পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘(কোরবানির পশুর) এগুলোর গোশত ও রক্ত আল্লাহর কাছে পৌঁছে না, বরং তার কাছে পৌঁছে তোমাদের মনের তাক্বওয়া। (সূরা: হজ্জ, আয়াত: ৩৭)।

এটাই কোরবানির মূল তত্ত। মনকে বিশুদ্ধ করে কোরবানি করলেই এ কোরবানি আল্লাহর দরবারে কবুল হবে। শুধু গোশত খাওয়া বা লোক দেখানো থেকে বিরত থাকতে হবে। নিয়ত বিশুদ্ধ ছাড়া কোরবানি কবুল হবে না।

নবী কারিম (সা.) সাধারণত নিজে একা কোরবানি করতেন। যেমনটা সাহাবায়ে কেরাম বণর্না করেছেন, ‘হজরত আনাস বিন মালিক (রা.) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দু’ শিং বিশিষ্ট দু’টি ধূসর বর্ণের মেষ কোরবানি করেছিলেন। তিনি (জবেহ করার সময়) বিসমিল্লাহ ও তাকবির বলেছিলেন। আমি তাঁকে নিজের পা সেটির পাঁজরের ওপর রেখে চেপে ধরে স্বহস্তে তা কোরবানি করতে দেখেছি। (সুনানে ইবনে মাজাহ, ৩১২০)।

কোরবানির পশু জবাইয়ের মধ্যে রয়েছে অসংখ্য পূণ্য। যার বর্ণনা পওয়া যায় রাসূল (সা.) এর বিভিন্ন হাদিসে। যেমন, ‘হজরত যায়দ বিন আরকাম (রা.) থেকে বর্ণিত- তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) এর সাহাবিরা বললেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ! এই কোরবানি কি? তিনি বলেন, তোমাদের পিতা ইব্রাহিম (আ.) এর সুন্নত। তারা পুনরায় জিজ্ঞাসা করেন, হে আল্লাহর রাসূল! এতে আমাদের জন্য কি (সওয়াব) রয়েছে? তিনি বলেন, প্রতিটি পশমের বিনিময় নেকি হবে। সাহাবারা বললেন, দুম্বা ও ভেড়ার পশমের কি হুকুম? তিনি বলেন, দুম্বা ও ভেড়ার প্রতিটি পশমের বিনিময়েও একটি করে নেকী রয়েছে। (সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস ৩১২৭)।

আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী করিম (সা.) বলেন, কোরবানির দিন আদম সন্তানের জন্য এমন কোনো কাজ নেই যা আল্লাহর নিকট রক্ত প্রবাহিত করার তুলনায় অধিক পছন্দনীয় হতে পারে। কোরবানির পশুগুলো কেয়ামতের দিন এদের শিং, খুর ও পশমসহ উপস্থিত হবে। কোরবানির পশুর রক্ত মাটিতে পড়ার পূর্বেই মহান আল্লাহর নিকট সম্মানের স্থানে পৌঁছে যায়। অতএব তোমরা কোরবানি করো। (সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস নম্বর: ৩১২৬)।

অপর দিকে যারা সামর্থ্য থাকা সত্তেও কোরবানি করবে না, তাদের প্রতি কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে নবী কারিম (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি সামর্থ্য থাকা সত্তেও কোরবানি করে না, সে যেন আমাদের ঈদগাহের ধারে কাছেও না আসে।’ (সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস নম্বর: ৩১২৩)।

প্রথমেই বলেছি, কোরবানি হলো নির্দিষ্ট দিনে নির্দিষ্ট পশুকে আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য জবাই করা। এর বাইরে অন্য পশু দ্বারা কোরবানি করলে তা গ্রহণযোগ্য হবে না। আর নির্দিষ্ট পশু হলো মোট ছয়টি। যথা: গরু, মহিষ, উট, দুম্বা, ছাগল, ভেড়া।

এ গুলোর প্রত্যেকটির জন্য রয়েছে আবার আলাদা আলাদ বয়সসীমা। নির্ধারিত বয়সের কম হলে সে পশু দ্বারা কোরবানি দেয়া যাবে না।

১. উটের নির্ধারিত বয়স পূর্ণ পাঁচ বছর হতে হবে।

২. গরু, মহিষের পূর্ণ দুই বছর হতে হবে।

৩. ছাগল, ভেড়া, দুম্বার পূর্ণ এক বছর হতে হবে। (তবে ৬ মাস বয়সের দুম্বা, ভেড়া যদি দেখতে এক বছর বয়সী ছাগলের মতো মনে হয় তবে তা দ্বারাও কোরবানি করা যাবে)।

পশু জবেহ করার সময় যারা ছুরি ধরবে সবার জন্য ‘বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবার’ বলা ওয়াজিব। তাদের কোনো একজন যদি ইচ্ছাকৃতভাবে বিসমিল্লাহ না পড়ে, তাহলে ওই পশু হারাম হয়ে যাবে এবং তা কারো জন্য খাওয়া জায়েয হবে না। ( ফতওয়ায়ে শামী)।

তবে যদি কোনো ব্যক্তি বিসমিল্লাহ বলতে ভুলে যায় তাহলে ওই পশু হালাল হবে এবং কোরবানিও আদায় হয়ে যাবে। ( ফতওয়ায়ে শামী)।

জবেহকৃত পশুর ৭টি জিনিস খাওয়া নিষেধ। সেগুলো হলো-

পিত্তথলি, মূত্রথলি, পুরুষাঙ্গ, স্ত্রী অঙ্গ, অন্ডোকোষ, চামড়ার নিম্ন ভাগের গুটি ও প্রবাহিত রক্ত। প্রবাহিত রক্ত সম্পূর্ণ হারাম। বাকিগুলো মাকরুহে তাহরিমি।

এছাড়াও আরো যেসব বিষয় আমাদের জানার প্রয়োজন সেগুলো অবশ্যই নিকটস্থ একজন বিজ্ঞ আলেমর কাছ থেকে যেনে নেবেন। মনে রাখতে হবে, আমার হাজার কিংবা লাখ টাকা যেন সামান্য ভুলের কারণে বিফলে না যায়। অসংখ্য নেকি থেকে যেন বিরত না হয়ে পড়ি।

সে জন্যে মহান প্রভূর কাছে প্রার্থনা, হে প্রভু! আমাদের কোরবানি তুমি কবুল করো! তোমার নৈকট্য লাভের তাওফিক দাও আমাদের। আমিন।

  যশোরের আলো
  যশোরের আলো