শনিবার   ১৮ মে ২০২৪   জ্যৈষ্ঠ ৩ ১৪৩১   ১০ জ্বিলকদ ১৪৪৫

  যশোরের আলো
সর্বশেষ:
দেশীয় শিং মাছের জিনোম সিকোয়েন্স উন্মোচন ২-৩ বছরের মধ্যে মহাকাশে যাবে বাংলাদেশের দ্বিতীয় স্যাটেলাইট রপ্তানি আয়ের লক্ষ্য ১১০ বিলিয়ন ডলার সেমিকন্ডাক্টর খাতে ১০ বিলিয়ন ডলার রপ্তানি আয়ের সম্ভাবনা নারীবান্ধব শিক্ষানীতির কারণে মেয়েরা এগিয়ে: প্রধানমন্ত্রী
২৮৩৫

স্বপ্ন যখন আইবিএ

প্রকাশিত: ২৭ ডিসেম্বর ২০১৮  

আইবিএ। শিক্ষার্থীদের কাছে এক স্বপ্নের নাম। সবাই একবার হলেও ভাবে, ইশ! যদি আইবিএতে ভর্তি হতে পারতাম। তাহলে চাকুরির আর অভাব হতো না!

যাইহোক, আইবিএ কি? সেটা আগে জেনে নেয়া দরকার। আইবিএ হলো ইন্সটিটিউট অফ বিজনেস এ্যাডমিন্সট্রেশন। বাংলাদেশের মানুষের কাছে যে কয়টি ড্রিগ্রি খুব বেশি সম্মানিত তার একটি হলো আইবিএ থেকে এমবিএ। বাংলাদেশের যে কয়টি বিশ্ববিদ্যালয়ে আইবিএ থেকে বিবিএ এবং এমবিএ ড্রিগ্রি দেওয়া হয় তা হলো-

১.ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

২.জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়

৩.রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) আইবিএ সবার উপরে তা বলার অপেক্ষা রাখেনা। ঢাবির আইবিএ তে ভর্তি হতে পারা অনেকটা স্বপ্নের মতো। বলা হয়ে থাকে, আইবিএ তে পড়তে পারলে জব আপনার পিছনে ঘুরবে আপনি জবের পিছনে না। তো চলুন আইবিএ নিয়ে যাবতীয় সব প্রশ্নের উত্তর জেনে নেই।

 

1.স্বপ্ন যখন আইবিএ

দেশে সর্বপ্রথম ঢাবিতে আইবিএ ইনস্টিটিউট যাত্রা শুরু করে ১৯৬৬ সালে। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) ১৯৯২ সালে যাত্রা শুরু করে আইবিএ এবং রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) আইবিএ যাত্রা শুরু করে ২০০০ সালের দিকে।

আইবিএ নিয়ে বেসিক কিছু বিষয়ঃ

আইবিএ তে বিবিএ করতে চার বছর লাগে। আর, এমবিএ করা যায় রেগুলার ও পার্ট টাইম হিসেবে, সময় লাগে যথাক্রমে দুই ও সাড়ে তিন বছর। তবে বিবিএ-তে যদি কিছু কোর্স আগেই করে আসেন, তবে সেগুলো না করার সুযোগ পেতে পারেন, এতে আপনার সময় কম লাগবে। যেকোনো ব্যাকগ্রাউন্ড থেকে এসেই আপনি বিবিএ বা এমবিএ করতে পারেন।

বিবিএ তে চতুর্থ বিষয়সহ এসএসসি ও এইচএসসি উভয় পরীক্ষায় অন্তত ৭.৫ থাকা লাগবে, দুটোর প্রতিটাতে ৩.৫ এর উপর থাকতে হবে। এমবিএ তে মোট খরচ ৮৭ হাজার টাকা, যা পরিবর্তনশীল; ভর্তির সময় শুরুতেই প্রথম বছরের জন্য ৪৮ হাজার টাকা নিয়ে নেয়া হয়। এমবিএ তে জুলাই সেশনে সিট ৬০টি। আর ডিসেম্বরে ১২০টি। জুলাইতে রেগুলালে ক্লাস করতে হয়, অর্থাৎ সকালে, সপ্তাহে চার দিন, পাঁচ সাবজেক্ট। ডিসেম্বর সেশনে পার্ট টাইম নেয়া যায়, রেগুলারও নেয়া যায়। পার্ট টাইমে বিকেলে ক্লাস করতে হয়, আপনি চাকরি করতে পারবেন সেক্ষেত্রে। এক্ষেত্রে দুই বা তিনটি সাবজেক্ট নিতে হয়। এমবিএ-র ক্ষেত্রে ২.৫ এর উপরে Undergrad এর সিজিপিএ রাখা লাগবে। EMBA (Executive MBA) এর পরীক্ষা খুব সহজ, তবে এক্ষেত্রে তিন বছরের চাকরি অভিজ্ঞতা লাগবে।

প্রস্তুতি যেভাবে নিবেনঃ

বিবিএ ভর্তি হবার ক্ষেত্রে, যদি আপনি এমন ব্যাকগ্রাউন্ড থেকে এসে থাকেন যেখানে আপনি গণিতে খুব ভালো ছিলেন, আর ইংরেজিতে আপনি তুখোড়- তবে আপনার চিন্তা কমে গেল বহু গুণে। আর এমবিএ-র ক্ষেত্রে সাধারণত ইঞ্জিনিয়ারিং ব্যাকগ্রাউন্ড থেকে আসা ছাত্র-ছাত্রীরা ভর্তি পরীক্ষায় অপেক্ষাকৃত ভালো করে।

কিন্তু তার মানে এই নয় যে আপনি অন্য ব্যাকগ্রাউন্ডের হলে আপনি পারবেন না; অবশ্যই পারবেন। জোর দিতে হবে ইংরেজি আর অংকে। কীভাবে? চলুন সেটাই জেনে নেই।

 

পরীক্ষায় চারটা সেকশন থাকবে- ম্যাথ, ইংলিশ, এনালাইটিক্যাল এবং লিখিত ইংরেজি। প্রথম তিনটি দেড় ঘণ্টার অবজেক্টিভ পরীক্ষা, আর শেষেরটি লিখিত পরীক্ষা আধা ঘণ্টার। কোন অংশ থেকে কত মার্কের প্রশ্ন আসবে সেটা নির্ধারিত নেই। একেক বছর একেক রকম আসে। সাধারণত ২৫-৩০টি ম্যাথ অবজেক্টিভ, ২৫- ৩০টি ইংলিশ অবজেক্টিভ আর ১৫-২০টি এনালাইটিক্যাল অবজেক্টিভ থাকে।

ইংরেজীর প্রস্তুতি নিবেন যেভাবে :

নিঃসন্দেহে আইবিএ প্রস্তুতির সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে ইংলিশ। কারন, প্রথমত ইংরেজী আমাদের মাতৃভাষা না। দ্বিতীয়ত, ছোটবেলা থেকে আমাদের ইংরেজী শেখার প্রসেসটাই ভুল । ইংরেজীতে ভালো করতে প্রথমেই আমাদের প্রচুর পরিমানে ইংরেজী শোনা দরকার। এরপর বলা , বেশী বেশী পড়া এবং লেখা দরকার । আমরা প্রথম ২টা করিনা বললেই চলে । ইংরেজীতে ভালো করতে হলে ইংরেজী শোনা এবং বলার কোন বিকল্প নেই ।

এবার আসি বইগুলো কিভাবে পড়তে হবে- গ্রামার দখল থাকলে সরাসরি অফিসিয়াল জিম্যাট রিভিউতে চলে যান । সেখানকার Sentence Correction থেকে ১০০ টা প্রবলেম করে ফেলুন । এই Sentence Correction গুলো এডভান্সড লেভেলের । সো ভুল করলে মন খারাপ করার কিছু নেই ।

 

এই ১০০ টা Sentence Correction এর মধ্যে যদি আপনি ৭০% এর মত কারেক্ট করে ফেলতে পারেন তাহলে বুঝতে হবে আপনি আইবিএর ইংলিশ সেকশনের জন্য ৮০% প্রিপেয়ারড। আপনার জাস্ট হালকা ফাইন টিউনিং করা লাগবে ।

ম্যাথসের প্রস্তুতি নিবেন যেভাবে:

আইবিএর ম্যাথসের প্রশ্নের ধরনে গত কয়েক বছরে বেশ কিছু চেঞ্জ এসেছে। বিশেষ করে ম্যাথগুলো এখন একটু ক্রিটিকাল হচ্ছে । তাই ম্যাথসে শুরু থেকেই একটু বেশী জোর দেয়া দরকার । প্রথমেই যেটা করতে পারেন সেটা হল, যে টপিকগুলো আইবিএতে ফ্রিকোয়েন্টলী আসে সে টপিকগুলো বাছাই করে ফেলুন । এবার দেখুন আপনি কয়টা টপিক ভালোভাবে পারেন । যেগুলো ভালো পারেন সেগুলোই আগে শুরু করুন । ম্যাথের বেসিক যদি মোটামুটি ভালো থাকে তাহলে অফিসিয়াল জিম্যাট রিভিউতে সরাসরি চলে যান । একটানে এখান থেকে ২৫০টা ম্যাথ করে ফেলুন ।

বাজারে রিসোর্সের অভাব নেই। দেখবেন অনেকেই অন্যান্য বইও রেফার করবে । তবে মাথায় রাখবেন যে, এসব বইগুলো কিন্তু প্রায় কাছাকাছি মানের । সো যেটাই করবেন খুব ভালোভাবে করবেন । আর যদি ম্যাথে দুর্বল থাকেন তাহলে, সবার আগে ক্লাস ৮, ৯, ১০ এর ইংলিশ ভার্সনের ম্যাথ বইগুলো থেকে ব্যাসিক ডেভেলপ করে নিতে পারেন । যে টপিকগুলো বুঝতে সমস্যা হবে সগুলো ইউটিউবে সার্চ করে নিবেন ।

লিখিত পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নিবেন যেভাবে :

অবজেক্টিভ পরীক্ষা শেষ করলে আপনাকে ৩০ মিনিটের মধ্যে দুটো লেখা লিখতে হবে। রচনা লেখার সময় ৩ প্যারাতে লিখবেন, তবে প্যারাগ্রাফ এক প্যারাতেই। কিন্তু কোনো ব্যাকরণগত বা বানান ভুল করতে পারবেন না।

আপনি যদি ইংলিশে ভালো পাঠক হন, তবে এই সেকশনটা আপনার জন্য এই পরীক্ষার সহজতম অংশ। চেষ্টা করবেন যতটুকু জায়গা দিয়েছে, পুরোটাই লিখতে। আবারো বলছি, ইংলিশে দক্ষতা বাড়ান। আপনাকে প্রচুর পড়তে হবে। পাশাপাশি লেখারও অভ্যাস করতে হবে। যদি সেটা করতে পারেন, তবে আপনার জন্য এটা খুবই সহজ। উল্লেখ্য, প্রতি সেকশনেই আলাদা পাশ করতে হয় আইবিএ ভর্তি পরীক্ষায়, তবে পাশ মার্কের পারসেন্টেজ বলে দেয়া নেই।

 

এখানে ২০ নম্বর, সাধারণত ২ টা অংশ থাকে। একটা short essay আর একটা গ্রামার রিলেটেড। শুধু আগের প্রশ্ন প্রাকটিস করবেন। short essay-এ সাধারণত বিজনেস রিলেটেড কিছু দেয়। সেটাকে একটু ডেটা, ইনফরমেশান দিয়ে ভাল ইংরেজি, ভাল ভোকাবিউলারি দিয়ে লিখতে চেষ্টা করবেন।

যেভাবে টাইম মেনেজমেন্ট করবেন:

এটা ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ। আইবিএ তে তিনটা পার্ট (Math, English, Analytical) এখানে আলাদা আলাদা পাশ করতে হয়। তাই অবশ্যই সব সেকশান টাচ করতে হবে।

তাই দেড় ঘন্টায় কিভাবে কি উত্তর করবেন, সেটার প্লান করে ফেলুন। মানে পরীক্ষার হলে গিয়ে সব ম্যাথ উত্তর করতে গিয়ে আপনি এনালাইটিকাল ধরলেনই না, এমন যেন না হয়। সবগুলো পার্টে পাশ নম্বর আগে নিশ্চিত করুন, তারপর আপনি যেটা ভাল মনে করেন, সেই পার্টে ফিরে যান।

ভাইভা:

ডিসেন্ট ড্রেস অবশ্যই পড়বেন। ইংরেজিতে ভাইভা হবে। আইবিএর শিক্ষকরাই ভাইভা নিবেন। তাই ভয় নেই বা ওভার স্মার্ট হবার দরকার নেই। শিক্ষকদের (কারো কারো) ইংরেজি উচ্চারন একটু আমেরিকান ধরনের হতে পারে। প্রশ্ন না বুঝলে বিনীতভাবে আবার জিজ্ঞেস করুন। একটু ভেবে চিন্তে উত্তর দেবেন। ভাইভা নিয়ে বেশি ভাবার কিছু নেই।

  যশোরের আলো
  যশোরের আলো
এই বিভাগের আরো খবর