রোববার   ১৯ মে ২০২৪   জ্যৈষ্ঠ ৪ ১৪৩১   ১১ জ্বিলকদ ১৪৪৫

  যশোরের আলো
৩১২১

বায়ুমণ্ডলের ওজোন স্তর : জীব-জগতের প্রাকৃতিক প্রতিরক্ষা ঢাল

প্রকাশিত: ২৭ নভেম্বর ২০১৮  

বিস্ময়ে ভরা বিশ্ব মোদের। আকাশে-বাতাসে অবিরাম ঘটছে ঘটনা বিস্ময়কর!

 

গ্রহ-নক্ষত্র ঘুরছে অবিরত; সূর্য যদিও শক্তি যোগায়, পৃথিবীই মোদের প্রাণকেন্দ্র।

সূর্যের রশ্মি ছাড়া করতে পারি কি আমরা জীবনের কল্পনা?

অথচ সেই রশ্মিতেও ‘অতিবেগুনি- রশ্মি’ নামে যে রশ্মি আছে, তা জীবের জন্য ক্ষতিকর।

মজার ব্যাপার হলো, সেই ক্ষতিকর রশ্মিকে প্রাকৃতিকভাবেই প্রতিহত করে আমাদের বন্ধু

‘বায়ুমণ্ডলের ওজোন স্তর’!

অতি সংক্ষেপে মহাবিশ্ব পরিচিতি

সদা চলমান ও সম্প্রসারণরত বিস্ময়ে ভরা এই মহাবিশ্ব। সমগ্র বিশ্বমাঝে আমরা অতি ক্ষুদ্র, তথাপিও সমগ্র বিশ্ব আমাদেরই জন্য! পৃথিবী এবং অন্যান্য সমস্ত গ্রহ, নক্ষত্র, গ্যালাক্সিসমূহ, তাদের অন্তর্বর্তী স্থানের মধ্যে অন্যান্য পদার্থ এবং শূন্যস্থান (মহাকাশ), দৃশ্য-অদৃশ্য সবকিছু মিলেই মহাবিশ্ব। মহাবিশ্বে রয়েছে আমাদের সৌরজগতের মতো আরো অসংখ্য সৌরজগৎ। আমাদের সৌরজগৎ বলতে সূর্য এবং এর সাথে মহাকর্ষীয়ভাবে আবদ্ধ সকল জ্যোতির্বৈজ্ঞানিক বস্তুকে বোঝায়। এর মধ্যে আছে: আটটি গ্রহ, তাদের ১৭৩টি জানা প্রাকৃতিক উপগ্রহ, কিছু বামন গ্রহ ও তাদের কিছু প্রাকৃতিক উপগ্রহ এবং কোটি কোটি ক্ষুদ্র বস্তু যেমন— গ্রহাণু, উল্কা, ধূমকেতু, এবং আন্তঃগ্রহীয় ধূলিমেঘ।

সূর্য

আমাদের পরিচিত সৌরজগতের কেন্দ্রের খুব কাছাকাছি অবস্থিত তারাটির নাম সূর্য, যাকে আমরা রবি নামেও ডাকি। গোলক আকৃতির এই তারা প্রধানত আয়নিক পদার্থ দিয়ে গঠিত যার মধ্যে জড়িয়ে আছে চৌম্বক ক্ষেত্র। সূর্যের ব্যাস প্রায় ১৩ লক্ষ ৯২ হাজার কিলোমিটার, যা পৃথিবীর ব্যাসের প্রায় ১০৯ গুণ। সূর্যের প্রধান গাঠনিক উপাদান হচ্ছে হাইড্রোজেন (সূর্যের মোট ভরের শতকরা প্রায় ৭৫ ভাগ), হাইড্রোজেনের পরই আছে হিলিয়াম (মোট ভরের শতকরা প্রায় ২৩-২৪ ভাগ), এ ছাড়া আছে অক্সিজেন, কার্বণ, নিয়ন, লোহা ইত্যাদি (সূর্যের ভরের প্রায় ১.৬৯%)।

পৃথিবী থেকে সূর্যের গড় দূরত্ব আনুমানিক ১৪.৯৬ কোটি কিলোমিটার যাকে ১ নভো একক হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এই গড় দূরত্বে সূর্য থেকে আলো পৃথিবীতে আসতে ৮ মিনিট ১৯ সেকেন্ড সময় লাগে। এই সূর্যালোকের শক্তি পৃথিবীর প্রায় সকল জীবকে বাঁচিয়ে রাখে। উদ্ভিদ সালোক সংশ্লেষণ প্রক্রিয়ায় এই আলো থেকে খাদ্য উৎপাদন করে এবং প্রাণীরা খাদ্যের জন্য এসব উদ্ভিদ বা অন্য প্রাণীর উপর নির্ভর করে। এছাড়া জলবায়ু এবং আবহাওয়া নিয়ন্ত্রণেও সূর্যালোক প্রধান ভূমিকা রাখে।

সূর্যরশ্মি

সূর্যরশ্মি বা তড়িৎ-চৌম্বকীয় বিকিরণ সূর্য থেকে মহাকাশে বিচ্ছুরিত হয় যার কিছু অংশ আমাদের এই পৃথিবীতে এসে পৌঁছে। কম্পাংকের পার্থক্যের ভিত্তিতে চৌম্বকীয় বিকিরণকে নানাভাগে ভাগ করা যায়। যেমন— বেতার তরঙ্গ (যার তরঙ্গ দৈর্ঘ্যের সীমা ১ মিলিমিটার থেকে ১০০ কিলোমিটার পর্যন্ত বিস্তৃত হয় যা খালি চোখে দেখা যায় না), মাইক্রোওয়েভ (তরঙ্গ দৈর্ঘ্য ১ মিলিমিটার হতে ১ মিটার পর্যন্ত), অবলোহিত রশ্মি (তরঙ্গ দৈর্ঘ্য ১ মাইক্রোমিটার হতে ১ মিলিমিটার পর্যন্ত), দৃশ্যমান আলো (তরঙ্গ দৈর্ঘ্য ৪০০ ন্যানো মিটার থেকে ৭০০ ন্যানো মিটার পর্যন্ত), অতিবেগুনী রশ্মি (তরঙ্গ দৈর্ঘ্য ১০০ ন্যানো মিটার থেকে ৪০০ ন্যানো মিটার পর্যন্ত), রঞ্জন রশ্মি (এক্স-রে) (তরঙ্গ দৈর্ঘ্য ১০ ন্যানো মিটার থেকে ০.০১ ন্যানো মিটার পর্যন্ত), এবং গামা রশ্মি  (তরঙ্গ দৈর্ঘ্য ১০ পিকোমিটার থেকেও ছোট)। বিভিন্ন রশ্মির বৈশিষ্ট্য ও ভূমিকা ভিন্ন। এদের মধ্যে অতিবেগুনী রশ্মি জীব জগতের উপর বিশেষ প্রভাব ফেলে।

অতিবেগুনী রশ্মি পরিচিতি ও জীব-জগতের উপর তার প্রভাব

অতিবেগুনী আলোক রশ্মি (Ultra violet rays)(UV rays) হচ্ছে সূর্যের আলোক রশ্মির সেই অংশ যার তরঙ্গ-দৈর্ঘ্য খুবই খাটো। অতিবেগুনী রশ্মিকে তরঙ্গ-দৈর্ঘ্য অনুযায়ী তিন ভাগে ভাগ করা হয়। যেমন— অতিবেগুনী রশ্মি- ‘সি’ (UV-C) (তরঙ্গ-দৈর্ঘ্য: ১০০-২৮০ ন্যানো মিটার), অতিবেগুনী রশ্মি- ‘বি’ (UV-B) ( তরঙ্গ-দৈর্ঘ্য: ২৮০-৩১৫ ন্যানো মিটার), অতিবেগুনী রশ্মি- ‘এ’ (UV-A) ( তরঙ্গ-দৈর্ঘ্য: ৩১৫-৪০০ ন্যানো মিটার)।

উল্লেখ্য যে, ১ ন্যানো মিটার= ১ মিটারের ১০০ কোটি ভাগের ১ ভাগ। অন্য কথায় ১ ন্যানো মিটার= ১ মিমি-এর ১ লক্ষ ভাগের ১ ভাগ। সহজেই অনুমেয়, দৈর্ঘ্যে কতো ক্ষুদ্র এই সব আলোক-রশ্মি।

বাতাসে অতিবেগুনী রশ্মি- ‘বি’ (UV-B)-এর পরিমাণ বৃদ্ধি পেলে, মৃত পচনশীল জৈব পদার্থ থেকে বর্দ্ধিত পরিমাণ কার্বন মনোক্সাইড ও নাইট্রোজেন অক্সাইডস উৎপন্ন হয়ে থাকে। ভূপৃষ্ঠের নিকটবর্তী ওজোন গ্যাস এবং কার্বন মনোক্সাইড এসিড রেইন (এসিড বৃষ্টি) সৃষ্টি করে। এসিড রেইন জীব কোষের ক্ষতিসাধন করে। অতিবেগুনী রশ্মি (Ultra violet rays)(UV rays) গুলোর মধ্যে, অতিবেগুনী রশ্মি- ‘সি’(UV-C) ওজোন স্তরে সম্পূর্ণভাবে শোষিত হয়, অতিবেগুনী রশ্মি- ‘বি’ (UV-B) এর মাত্র ৫% ভূপৃষ্ঠে পৌঁছে এবং অতিবেগুনী রশ্মি- ‘এ’ (UV-A) এর ৯৫% ভাগই বায়ুমণ্ডলের স্তরসমূহ ভেদ করে ভূপৃষ্ঠে পৌঁছতে পারে। অতিবেগুনী আলোকরশ্মি (Ultra violet rays)(UV rays) গুলো গাছপালা, তরুলতা, প্রাণি, অনুপ্রাণি সকলের উপরই ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে। তবে, অতিবেগুনী রশ্মি- ‘বি’ (UV-B) ভিটামিন ‘ডি’ সংশ্লেষণ করতে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

পৃথিবী, বায়ুমণ্ড  জীবজগৎ

সমগ্র বিশ্বে একমাত্র আমাদের গ্রহ অর্থাৎ এই পৃথিবীই হলো মানুষসহ কোটি কোটি প্রজাতির আবাসস্থল। পৃথিবী সূর্য থেকে দূরত্ব অনুযায়ী তৃতীয়, সর্বাপেক্ষা অধিক ঘণত্বযুক্ত এবং সৌরজগতের আটটি গ্রহের মধ্যে পঞ্চম বৃহত্তম গ্রহ। এটি সৌরজগতের চারটি কঠিন গ্রহের অন্যতম। পৃথিবীর পৃষ্ঠ অর্থাৎ ভূপৃষ্ঠের প্রায় তিন ভাগ জল এবং এক ভাগ স্থল। সমতল ভূমি, পাহাড়-পর্বত, নদী-নালা, খাল-বিল, বন-জঙ্গল নিয়ে স্থলভাগ, এবং সাগর-মহাসাগর  সমন্বয়ে জলভাগ গঠিত। স্থলভাগের সমতল ভূমি মৃত্তিকা আবৃত। সমগ্র পৃথিবীকে পরিবেষ্টন করে আছে স্তরে স্তরে সাজানো বায়ুমণ্ডল। এসব কিছু নিয়েই পৃথিবীতে বসবাসের উপযোগী পরিবেশে আমাদের এই জীব জগৎ।

পৃথিবীকে ঘিরে থাকা আকাশের সবচেয়ে নিকটবর্তী বলয়ে রয়েছে বায়ুমণ্ডল। সেই বায়ু মণ্ডল (Atmosphere)-এ চারটি স্তর রয়েছে যা তাপমাত্রার পরিবর্তন দ্বারা পৃথক। এই স্তরগুলো হচ্ছে—  ট্রপোস্ফিয়ার, স্ট্রাটোস্ফিয়ার, মেসোস্ফিয়ার ও থার্মোস্ফিয়ার।

ট্রোপোস্ফিয়ার: এটি ভূপৃষ্ঠের নিকটতম স্তর। ভূ-পৃষ্ঠ থেকে শুরু করে ৭ থেকে ২০ কি:মি: (২৩,০০০ – ৬৫,০০০ ফুট) পর্যন্ত বিস্তৃত।  আবহাওয়ার পরিবর্তন এই স্তরেই ঘটে থাকে।

স্ট্র্যাটোস্ফিয়ার: স্ট্র্যাটোস্ফিয়ার স্তর ৩০ কি:মি: পর্যন্ত পুরু হয়। ভূপৃষ্ঠের ১০ কি:মি: উপর থেকে শুরু করে ৫০ কি:মি: পর্যন্ত বিস্তৃত। বায়ুমণ্ডলের এই স্তরেই ওজোন গ্যাসের স্তর বিরাজমান।

মেসোস্ফিয়ার অধিকাংশ উল্কা (Meteors) এখানে ভস্ম হয়। ৩৫ কি:মি: পুরু। ভূপৃষ্ঠের ৫০ কি:মি: উপর থেকে ৮৫ কি:মি: পর্যন্ত বিস্তৃত। খুবই ঠাণ্ডা। তাপমাত্রা -৯৩ (মাইনাস ৯৩) ডিগ্রি সেলসিয়াস।

থার্মোস্ফিয়ার: ভূপৃষ্ঠের ৯০ কি:মি: উপর থেকে শুরু করে কম বেশি ৫০০ থেকে ১০০০ কি:মি: পর্যন্ত বিস্তৃত হতে পারে। উচ্চতা বৃদ্ধির সাথে সাথে তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায় (১৫০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত) কিন্তু উষ্ণতা অনুভূত হয় না কারণ বায়ুর চাপ কম।

ওজোন গ্যাসের বৈশিষ্ট্য

ওজোন একটি তীব্র গন্ধযুক্ত হালকা নীল বর্ণের বিষাক্ত গ্যাস। ওজোন গ্যাস তৈরি ও ধ্বংস হওয়া একটি চলমান প্রক্রিয়া। অম্লজান বা অক্সিজেন গ্যাসের তিনটি পরমাণু (O) একত্রিত হয়ে ওজোন গ্যাস (O3) তৈরি হয়। বায়ুমণ্ডলীয় ওজোন গ্যাসের ঘণত্ব খুবই কম (প্রতি এক কোটি বায়ু অণুতে মাত্র তিনটি ওজোন অণু থাকে)। ওজোন গ্যাস প্রধানত স্ট্রাটোস্ফিয়ারে থাকে। আর ট্রোপোস্ফিয়ারে মাত্র ১০% ওজোন পাওয়া যায়।

ওজোন স্তরের গুরুত্ব

ওজোন স্তর হচ্ছে পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের একটি স্তর যেখানে তুলনামূলকভাবে বেশি মাত্রায় ওজোন গ্যাস থাকে। এই স্তর থাকে স্ট্রাটোস্ফিয়ারের নিচের অংশে, যা ভূপৃষ্ঠ থেকে কমবেশি ২০-৩০ কিমি উপরে অবস্থিত। অতিবেগুনী রশ্মি প্রাণী ও উদ্ভিদের মারাত্মক ক্ষতি করে। স্ট্রাটোস্ফিয়ারের ওজোন স্তর অতিবেগুনী রশ্মি শোষণ করে ভূপৃষ্ঠের জীব-জগতকে রক্ষা করে।

বিশেষজ্ঞদের মতে., ওজোন স্তর ক্ষয়ের ফলে সূর্যের অতি বেগুনী রশ্মি পৃথিবীতে এসে পৃথিবীকে মাত্রাতিরিক্ত উত্তপ্ত করবে। ফলে সমুদ্রের পানির উচ্চতা বৃদ্ধি পাবে, নিম্নভূমি প্লাবিত হবে, পানির লবণাক্ততা বৃদ্ধি পাবে, আকস্মিক বন্যা, নদী ভাঙন, খরা, সামুদ্রিক জলোচ্ছ্বাস প্রকট হবে। মানুষের ত্বকের ক্যান্সার ও অন্ধত্ব বৃদ্ধি পাবে, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাবে। উদ্ভিদের জীবকোষ ক্ষতিগ্রস্ত হবে, সমুদ্রে প্রাণীর সংখ্যা কমে যাবে, ফাইটোপ্লাংকটন উৎপাদন কমে যাবে। বিশেষজ্ঞগণ লক্ষ্য করেছেন যে, ওজোন নিঃশেষকরণ (Ozone depletion) প্রক্রিয়ার ফলে গড় বৈশ্বিক তাপমাত্রা ইতোমধ্যেই ৫.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস বৃদ্ধি পেয়েছে।

ওজোন স্তর ধ্বংস প্রক্রিয়া

১৯৭০-এর দশক থেকে দক্ষিণ মেরু অঞ্চলের আকাশে ওজোন নিঃশেষকরণ (Ozone depletion) প্রক্রিয়া দৃষ্টিগোচর হয়। ওজোন নিঃশেষকারী পদার্থ যেমন— প্রোপেলান্ট (নমনীয় ও শক্ত ফেনা তৈরীকরণে ব্যবহৃত হয়), হিমায়ন বা রেফ্রিজারেশন, এয়ার কন্ডিশনার, এবং পরিষ্করণের দ্রাবকের ব্যবহার বৃদ্ধির ফলে ২০০০ সাল থেকে প্রতি বছর প্রায় ০.৫% হারে ওজোন নিঃশেষকরণ প্রক্রিয়া বৃদ্ধি পাচ্ছে।

এছাড়াও প্রাকৃতিকভাবে বায়ুমণ্ডলে মুক্তিপ্রাপ্ত ওজোন নি:শেষকারী হ্যালোকার্বন যেমন- ক্লোরোফ্লুরোকার্বন (CFCs), হাইড্রো ক্লোরোফ্লুরোকার্বন (HCFCs), হাইড্রো ফ্লুরোকার্বন (HFCs), এবং ব্রোমো ফ্লুরোকার্বন (BFCs) ওজোন স্তর নিঃশেষকরণ (Ozone layer depletion) প্রক্রিয়ায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। হ্যালোকার্বন থেকে বায়ুমণ্ডলে ক্লোরিন, ব্রোমিন ইত্যাদির ঘনত্ব বাড়ে। মেরু অঞ্চলে ৭৮ ডিগ্রি সে: তাপমাত্রায় একটি ক্লোরিন বা CFC অনু এক লক্ষ ওজোন অনু ধ্বংস করতে পারে। CFC অনু UV রশ্মি দ্বারা ভেঙে ক্লোরিন ফ্রি-র‍্যাডিকেল গঠন করে। উক্ত ফ্রি-র‍্যাডিকেল খুবই সক্রিয় হওয়ায় ওজোনের সাথে বিক্রিয়া করে ওজোন স্তরকে ক্ষয় করে। এ ছাড়াও বায়বীয় নাইট্রোজেন যৌগ (যেমন- NO, NO2 এবং N2O) বায়ুমণ্ডলে অতি সামান্য পরিমাণ থাকলেও বৃহত্তম ওজোন নিঃশেষকারী পদার্থ হিসেবে বিবেচিত হয়।

ওজোন স্তর সংরক্ষণে করণীয়

মানবজাতি তথা সমগ্র জীব-জগতের প্রতিরক্ষায় ওজোন স্তরের ভূমিকা বিবেচনা করে, ওজোন স্তরের ক্ষয়রোধকল্পে কানাডার মন্ট্রিলে জাতিসংঘের পরিবেশ কর্মসূচির তৎপরতায় ১৯৮৭ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর ‘মন্ট্রিল প্রটোকল’ স্বাক্ষরিত হয়। অতঃপর ১৯৯৪ সালে ১৬ সেপ্টেম্বরকে ‘আন্তর্জাতিক ওজোন স্তর সংরক্ষণ দিবস’  হিসেবে পালনের জন্য ঘোষণা করা হয়। ভবিষ্যতে হাইড্রোক্লোরোফ্লোরো কার্বণ (HCFC) ব্যবহার বন্ধ করার মাধ্যমে মন্ট্রিল প্রটোকলের চূড়ান্ত বাস্তবায়ন সম্ভব হবে মর্মে আশা করা যায়। সিএফসি বা কার্বণ নিঃসরণকারী যন্ত্রপাতির ব্যবহার কমানোর জন্য জাতিসংঘের ১৯৮৫ সালে ভিয়েনা কনভেনশনে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। শিল্পোন্নত দেশগুলোকে এ বিষয়ে অগ্রণী ভূমিকা নিতে হবে। তবে, সকল দেশকেই এ ব্যাপারে পদক্ষেপ নিতে হবে। বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি বাস্তবায়ন পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

উপসংহার

মহাবিশ্ব মাঝে আমাদের পৃথিবীই একমাত্র গ্রহ যেখানে সুন্দর পরিবেশ গড়েছেন মহান আল্লাহ মানুয়ের বসবাসের জন্য। ঝুলন্ত মহাবিশ্ব সদা চলমান! মহাজাগতিক বস্তুসমূহের মাঝে রয়েছে পারস্পরিক আকর্ষণ। স্ব স্ব দায়িত্ব পালনে নেই তাদের অবহেলা। অসতর্কতা-অবহেলা দেখি শুধু মানুষের বেলা। শ্রেষ্ঠ জীব মানুষের পক্ষে এটা একদম মানায় না! সতর্কতার সাথে দায়িত্ব পালন করতে হবে ঝেড়ে ফেলতে হবে অলসতা। আসুন, আমরা সতর্ক হই: যানবাহনের ধোঁয়া কমাই; রেফ্রিজারেটর, এয়ারকুলারসহ সকল যন্ত্রপাতি স্বাস্থ্যসম্মত যথাযথভাবে ব্যবহার করি। সিএফসি গ্যাস উৎপাদন সহ্য সীমার মাঝে রাখি। সার্বিকভাবে দূষণমুক্ত পরিবেশ বজায় রাখি। সকলেই সুস্বাস্থ্য নিয়ে বেঁচে থাকি।

  যশোরের আলো
  যশোরের আলো
এই বিভাগের আরো খবর